চায়ের শহর হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের পূর্ব পাশে অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল (Baikka Beel) অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে বাইক্কা বিলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ২০০৩ সালের ১ জুলাই বাইক্কা বিলকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের পর বাইক্কা বিলকে ঘিরে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত থাকা বাইক্কা বিলে রয়েছে বালি, বুনো হাঁসের বসতি ও গরু মহিষের বিশাল চরন ভূমি। প্রতি শীতে বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে দূর দূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশী পর্যটকরা এখানে ভিড় জমায়। বর্তমানে হাওরটি ৮০ প্রজাতির মাছ, ১৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ এবং প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। বিপুল পরিমাণ পাখির আগমণের কারণে প্রতি বছর এই বাইক্কা বিলে পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয় এবং এই তথ্য আন্তর্জাতিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
১০০ হেক্টর জলাভূমি জুড়ে বিস্তৃত জলজ ও উভচর প্রাণীর আবাসস্থল বাইক্কা বিলের উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে আছে পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, জল মোরগ, ধলাবক, ধূপনি বক, রাঙ্গা বক, মাছ রাঙ্গা, গোবক, শঙ্খচিল ইত্যাদি। মৌসুম ভেদে নবরূপে সেজে উঠা বাইক্কা বিলের বিশাল জলরাশি ভরে উঠে হিজল, কলমি, নয়নকারা, পানা, শাপলা, নীল পদ্ম, সিংড়া ও মাখনার মতো নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্রে। দর্শনার্থীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুবিধার্থে বিলের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দ্বিতল অবজারভেশন টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ঘন সবুজ বন ও পুরো বিলের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাসে চড়ে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে সিলেটগামী উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২২০ থেকে ১০০০ টাকা। এছাড়া হানিফ, এনা, শ্যামলী এবং সিলেট এক্সপ্রেসের মতো বাসে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল হতে ইজিবাইক, অটো রিকশা কিংবা মাইক্রো ভাড়া করে সহজে বাইক্কা বিল ঘুরে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে শুধু বাইক্কা বিল ঘুরতে গেলে এক দিনের মধ্যেই ঢাকায় ফিরে আসা সম্ভব। রাত্রি যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গল শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে হোটেল মেরিনা, প্যারাডাইস লজ, হোটেল মহসিন প্লাজা, নভেম ইকো রিসোর্ট, নিসর্গ ইকো কটেজ, শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, শান্তি বাড়ি ইত্যাদি।
কোথায় খাবেন?
শ্রীমঙ্গল শহরের গ্র্যান্ড তাজ, হাবিব হোটেল, কুটুম বাড়ী ও শ্রীমঙ্গল ইনের খাবার বেশ জনপ্রিয়। তবে বাইক্কা বিলের যাওয়ার সময় সাথে শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন। অবশ্যই শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত সাত রঙের চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
মৌলভীবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান: মৌলভীবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, মাধবকুন্ড ও হামহাম জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য।