নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কাণ্ডারী চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। রবিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে মিস্টার কাঞ্চনকে জ্ঞানপাপী বলে উল্লেখ করেন শাজাহান খান। তিনি তার মুখোশ উন্মোচন করবেন বলেও হুমকি দেন। এসব মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক এই নৌমন্ত্রী।
ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান, সেখান থেকে কত টাকা নিজে নেন, পুত্রের নামে নেন, পুত্রবধূর নামে লাখ লাখ টাকা নেন; সেই হিসাব আমি জনসমক্ষে তুলে ধরব।'
ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে এসব মন্তব্য করার কারণ জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চন জনগণের মধ্যে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির চেষ্টা করছেন। আর এ কারণেই তার বিরুদ্ধে তিনি এসব মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, 'উনি পাবলিকের মধ্যে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একটি সেন্টিমেন্ট তৈরি করতে চান, এজন্যই আমি এসব কথা বলেছি।'
১৯৯৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। যার কারণে বিভিন্ন সময় পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। এছাড়া ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার পর চলতি বছর নিরাপদ সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। সম্প্রতি আইনটি কার্যকরও করা হয়। কিন্তু শাজাহান খান বলেন,নতুন এই আইনে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় এই আইন বাস্তবিক পক্ষে কার্যকর করা সম্ভব নয়।
শাজাহান খানের অভিযোগ, ইলিয়াস কাঞ্চন অসঙ্গতি রেখেই আইন কার্যকরের পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছেন। তার ভাষায়, 'শ্রমিকরা এটা কখনই মেনে নেবে না। উনি (ইলিয়াস কাঞ্চন) একটা এনজিও চালান। যেটি দেশের টাকা পায় বিদেশের টাকা পায়। কিন্তু উনি কি ড্রাইভার সৃষ্টি করতে পারছেন? উনার তো একটা ড্রাইভিং স্কুল আছে। কিন্তু সেখানে ৭ বছরে মাত্র ৪১১ জন ড্রাইভার তৈরি করছে। উনি এই কথা বলেন কি করে?'
শাজাহান খানের এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে ইলিয়াস কাঞ্চনের সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। এ বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মেয়ে ফারিহা ফাতেহ জানান, নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। যার কারণে তার মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। তবে দুই-একদিনের মধ্যে তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তিনি । সংগঠনটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয় বলেন, 'মিডিয়ার সামনে এ ধরণের কথা বলায় বিস্মিত হয়েছি আমরা।'
সারা দেশে নিসচার ১০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। আর কর্মী রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। মিরাজুল মইন জয় আরও বলেন, 'নিসচার চেয়ারম্যানের উপর আঙ্গুল তোলা মানে এসব মানুষের সবার উপরই আঙ্গুল তোলা। তার (শাজাহান খান) এসব অভিযোগের সব গুলোই ভিত্তিহীন। এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ নিসচা এবং ইলিয়াস কাঞ্চনের সুনামের প্রতি হুমকি। শাজাহান খানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। আর সেটি না পারলে ক্ষমা চাইতে হবে। এছাড়া আইনী ব্যবস্থার দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
-বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন