রাজশাহীর বাঘায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একটি পরিবারকে ৯ দিন থেকে এক ঘরে করে রাখার হয়েছে। পরিবারের একমাত্র অসুস্থ উপার্জনকারী ব্যক্তির মাঝপাড়া বাজারে ছোট একটি সবজির দোকান থেকে জিনিসপত্র না কেনার জন্য এলাকাবাসীকে নির্দেশ দিয়েছেন সমাজ প্রধানরা। ফলে এ ঘটনার পর থেকে বিয়ের উপযুক্ত মেয়েকে নিয়ে বেকায়দার পড়েছে এই পরিবার।
জানা যায়, বাঘা উপজেলার বাউসা মাঝপাড়া গ্রামের অজিত কুমার প্রামাণিকের সাথে সমাজ প্রধান রনজিত সরকার, গোউর সরকার, আনন্দ কুমার, অতুল প্রফেসার, রহিনী কান্ত প্রামাণিক, জিতেন কুমার প্রামাণিক, নিরা বাবুর সাথে পরিত্যক্ত মন্দিরের জমির আইল দিয়ে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ আগে দ্বন্দ্ব হয়। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে অজিত কুমার প্রামাণিকের স্ত্রী মুক্তি রানিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে সমাজ প্রধানরা গত ২৭ নভেম্বর সামাজিকভাবে শালিস করে। এই শালিশে প্রকাশ্যে জোড়হাত করে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই শালিশে তিনি ক্ষমা না চাওয়ায় ৯ দিন থেকে এক ঘরে করে দিয়েছেন।
তারপর থেকে এই পরিবারের অসুস্থ একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির মাঝপাড়া বাজারে ছোট একটি সবজির দোকান থেকে জিনিসপত্র না কেনার জন্যও সমাজ প্রধানরা এলাকাবাসীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া এই দোকান থেকে কেউ জিনিসপত্র ক্রয় করলে তার মতো এক ঘরে করে দেওয়া হবে। ফলে এ ঘটনার পর থেকে বিয়ের উপযুক্ত মেয়েকে নিয়ে বেকায়দার পড়েছে অজিত কুমারের পরিবার।
এ বিষয়ে অজিত কুমার প্রমাণিক বলেন, আমার ছোট একটি সবজির দোকান রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সমাজের কেউ জিনিস ক্রয় করে না। আমার দোকান থেকে সমাজের কেউ জিনিস ক্রয় করলে আমার মতো তাদেরও এক ঘরে করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে সমাজ প্রধানদের ভয়ে সমাজের কেউ আমার সাথে কথা ও জিনিস ক্রয় করছে না। বর্তমানে আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। এ নিয়ে বড় চিন্তায় আছি।
অজিতের স্ত্রী মুক্তি রানী বলেন, কিছুদিন হলো আমার বাড়িতে মনসা পূজার মন্দির ও রাধা কৃষ্ণ মন্দির করেছি। তারপর থেকে সমাজের লোকজন আজেবাজে কথা বলে। বাড়ির পাশে মন্দির বাদ দিয়ে আমার বাড়িতে কেন মন্দির করা হয়েছে। এ নিয়ে মাস দু’য়েক আগে আমাকে সমাজের প্রধানরা নির্যাতন করে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার দেড় মাস পরে পরিত্যক্ত মন্দিরের জমির পাশে আমার জমি রয়েছে। এই জমির আইল দিয়ে মাটি কাটতে গেলে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে নির্যাতন করে। পরে সমাজ প্রধানরা শালিশ ডেকে এক ঘরে করে দিয়েছে।
বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অজিত কুমার একজন অসুস্থ মানুষ। তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হয়। তবে বিষয়টি দেখে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
বাউসা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। এই গ্রামের প্রধানরা যে কাজটি করেছেন এটা করা ঠিক করেনি।
সমাজ প্রধান রনজিত সরকার বলেন, সমাজের বসবাস করতে হলে কথা শুনতে হবে। সমাজের পক্ষ থেকে তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। সে সমাজের কথা অমান্য করায় তাকে এক ঘরে করে দেয়া হয়েছে। তার সাথে সমাজের কেউ কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তাকেও এক ঘরে করে দেওয়া হবে বলে জানান।
এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে এটি একটি দণ্ডনীয় অবরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।