বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতি সংক্রান্ত ১৫ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ওয়ার্ড বেসিসে রেন্ট কন্ট্রোলার (ভাড়া নিয়ন্ত্রক) নিয়োগ, বাড়িভাড়া আইনের অসঙ্গতি দূর করে ভাড়ার আদর্শ মান নির্ধারণ ও সুপারিশের জন্য একটি কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব,আইন সচিব, ভূমি সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক সম্পূরক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন।
১৯৯১ সালে বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি জারি করা হয়। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মহানগরীকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)।
আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘নিয়ন্ত্রক, বাড়ি-মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে, কোন বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করিবেন এবং এমনভাবে উহা নির্ধারণ করিবেন যেন উহার বাৎসরিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থিরকৃত উক্ত বাড়ির বাজার মূল্যের ১৫% শতাংশের সমান হয়
তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে মানসম্মত ভাড়ার পরিমাণ Premises Rent Control Ordinance, 1986 (XXII of 1986) এর অধীন নির্ধারণ করা হইয়াছে সে ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া, নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সংশোধন বা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত, এই ধারার অধীন নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া হিসেবে গণ্য হইবে।’
সম্পূরক আবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ১৭ মে হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেছিল। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৫ সালের ১ জুলাই পর্যবেক্ষণসহ জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয়। কিন্তু রায় প্রকাশের আগেই ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বজলুর রহামনের অকাল মৃত্যু হলে বাদিপক্ষ রায়ের অনুলিপি পাননি।
পরবর্তী সময়ে এই রিট মামলাটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে হাইকোর্টের এই বেঞ্চে আসে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া আইনে ভাড়া নির্ধারণ করার যে পদ্ধতি বলা আছে, সেই পদ্ধতি অনুসারে এখন যে বাসার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা সে বাসার ভাড়া হবে ৯০ হাজার টাকা। এটাই হলো দেশের প্রচলিত আইন।
এই কারণে ভাড়া নির্ধারণের জন্য মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে বিধান ছিল সে ব্যপারে কেউ আদালতে যাচ্ছে না। কারণ এটা অসম্ভব এবং অকার্য্কর। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে আইনটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত শুনেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। যার ফলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ হচ্ছে। অনেক বাড়িওয়ালাই ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন, অনেক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। এই সমস্ত নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ভাড়াটিয়া যে আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবে, আইনি জটিলতা এতটাই বড় যে সে কারণে সেটা তারা পারছে না। এই কারণে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম কমিশন গঠনের জন্য। সেই আবেদন শুনে আদালত রুল জারি করেছেন।’
এ আইনের বিধান কার্যকর না হওয়ায় এবং কোন এলাকার ভাড়া কত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর চেয়ে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
একই বছরের ১৭ মে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রশিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশির ভাগ সময় বাড়ির মালিকেরা সেটা পালন করছেন না। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসারেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না।
এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
কিন্তু রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগেই প্রয়াত হলেন রায় দানকারী বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে প্রধান বিচারপতি ফের এ মামলার শুনানির জন্য বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠান। পরে উক্ত বেঞ্চে একটি সম্পূরক আবেদন দেয় এইচআরপিবি।