Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ সোমবার, জুলাই ২০২৫ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘এবার ৩০০ টাকা কেজিতে উঠতে পারে পেঁয়াজের দাম’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০১:১৮ PM
আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০১:১৮ PM

bdmorning Image Preview


গত দুই মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি তুমুল আলোচনায় এলেও কোরবানির ঈদের পরে থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গিয়ে এখন তা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দুই মাস আগে ৪০ টাকা কেজি দরে যে পেঁয়াজ কিনেছেন ক্রেতারা আজ সেই পেঁয়াজ কিনছেন ২৩০ টাকা কেজি দরে।

রাতারাতি পেঁয়াজের এমন মূল্য বৃদ্ধিকে অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য মনে করছেন পেঁয়াজ কিনতে আসা কারওয়ান বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গতকালের দাম অনুযায়ী দশ কেজি পেঁয়াজ কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বাজারে এসে সেই টাকায় পাচ্ছি সাত কেজি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাজারের পরিস্থিতি এতটা বদলে যাচ্ছে, এটা অকল্পনীয়!

এই হোটেল ব্যবসায়ী মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে যারা কর্তাব্যক্তি আছেন, পেঁয়াজের বাজার সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। ধারণা থাকলে পেঁয়াজের বাজারের এই অবস্থা হতো না এবং পেঁয়াজের দাম কমবে বলে একেকজন একেক দিন আলাদা আলাদা বক্তব্য দিতেন না।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা খুশবুল ইসলাম বলেন, কেন কিভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তা আমরা জানি না। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণ সবার আগে আমাদেরই ব্যাখ্যা করতে হয়। ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডায় গিয়ে পৌঁছায়। অথচ দাম বাড়ার পিছনে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা আড়তে যাওয়ার পর জানতে পারি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

কেন পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ২৪ নম্বর আড়তের মালিক আশরাফ আলী বলেন, নানা কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। একে তো দেশে পেঁয়াজের স্টক নেই। অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে।

হিসাব কষে আড়তদার আশরাফ আলী বলেন, যখন দেশে পেঁয়াজের অর্ধ মৌসুম ছিল তখনও প্রতিদিন শুধু পাবনা থেকেই ঢাকায় আসতো ১০০ ট্রাক পেঁয়াজ। আর সারা দেশের বিভিন্ন বন্দর ও মোকাম থেকে আসতো কমপক্ষে ২০০ ট্রাক। আর এখন আসে সাকুল্যে দশ ট্রাক। তাহলে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না কেন?

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকটের অবস্থা বিবেচনা করে বার্মা (মিয়ানমার) ও মিশরের মতো দেশগুলো পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। আর পেঁয়াজ এমন একটা পণ্য যা পচনশীল, দেখা গেলো পঞ্চাশ বস্তা পেঁয়াজ আনলে কখনো কখনো সেখানে বিশ বস্তা টেকে, বাকিটা নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে বার্মা থেকে যে পেঁয়াজগুলো আসে সেগুলো অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে যায় পরিবহনকালীন সময়েই। নষ্ট পেঁয়াজের দাম তুলতেই দামটা আরও বেড়ে যায়।

আশরাফ আলী বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমি মিশরের পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি করেছি ১৪০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু আজকে এই পেঁয়াজ কিনেছি ১৮০ টাকা কেজি দরে। তাহলে আমি বা আমরা বিক্রি করব কত টাকা করে? লোকসান দিয়ে নিশ্চয়ই ব্যবসা করব না?

বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) অনেকটা দায়ী বলে মন্তব্য করেন আড়তের এক কর্মচারী। তিনি বলেন, টিসিবি যে অল্প মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে এটার জন্যেও বাজারে প্রভাব পড়ে। টিসিবি যে পেঁয়াজগুলো বিক্রি করছে সেগুলো তারা শ্যামপুর মানে আমরা যেখান থেকে পেঁয়াজ কিনি সেখান থেকেই কেনে। একে তো বাজারে পেঁয়াজ সংকট তার ওপর সরকারিভাবে সেখান থেকে পেঁয়াজ কিনে তারা কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করে। এতে আমরা চাহিদামতো পেঁয়াজ তো কিনতেই পারি না তার ওপর অল্প পেঁয়াজের অর্ধেক তারা কিনে নিয়ে যায়। মূল সংকটটা তৈরি হয় এখানে। টিসিবি যদি সরাসরি পেঁয়াজ আমদানি করতো তাহলে সুফলটা পাওয়া যেত।

কবে নাগাদ পেয়াজের দাম কমবে এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক আড়তদার বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে ওঠার দিন পনের পরে পেঁয়াজের দাম কমবে। এর আগে কোনভাবেই কমার সম্ভাবনা নেই৷ এবার ৩০০ টাকা কেজিতে উঠতে পারে পেঁয়াজের দাম। কেউ কেউ বলছেন এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ তিন শত টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পেঁয়াজের মজুদ খুব একটা নেই। যারা দৈনিক ৫০ বস্তা পেঁয়াজ কেনেন তারা ১০ বস্তাও কিনতে পারছেন না। কেউ টাকা সংকটের কথা বললেও বেশির ভাগ আড়তদাররা বলছেন, টাকা নিয়ে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ঘুরে আসতেছি শ্যামবাজার থেকে। পকেটে টাকা থাকলেও সেখানে পেঁয়াজ নেই।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) আড়তগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২২৫ টাকা কেজি দরে, বার্মিজ পেঁয়াজ ২০০-২২৫ এবং মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। এসব পেঁয়াজা খুচরা বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।

Bootstrap Image Preview