পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় নরসিংদীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ নুসরাত তামান্না ওরফে বুবলীর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে আলাপকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কাদের। সেখানে বুবলীর জালিয়াতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, তিনি দলের এমপি। তাই দলীয় সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। আর যদি পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে জাতীয় সংসদের অবিভাবক স্পিকার রয়েছেন। তার গোচরে বিষয়টি নিশ্চয় আছে। তিনিও ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেটাও দেখার বিষয়।
প্রসঙ্গত, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পাস পরীক্ষায় ভাড়াটে ছাত্রী দিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছেন এমপি বুবলী। তিনি ঢাকায় থেকে নরসিংদীতে আটজন ছাত্রী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের হাতে ধরা পড়ে যান। সাংবাদিকরা ভাড়াটে ছাত্রীকে তার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে প্রথমে নিজের নাম তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন। পরে সাংবাদিকরা চ্যালেঞ্জ করলে সে তার আইডি কার্ড দেখাতে ব্যর্থ হন।
এ সময় ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় প্রক্সি পরীক্ষা দিতে আসা ভাড়াটে ছাত্রীটি পরীক্ষার হল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। এ ঘটনা টিভি চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হন। এর আগে ঘটনা জানার পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ এমপি বুবলী ও তার লোকজনের ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ভাড়াটে ছাত্রীরা তাদের আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে মর্মে জিডির কপি নিয়ে আসার কারণে তারা বুবলীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। বুবলী নিহত নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী তামান্না নুসরাত বুবলী তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন যে তিনি এইচএসসি পাস। পরে উচ্চশিক্ষা অর্জনে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। জাতীয় সংসদের একজন এমপি হয়েও তিনি বিএ পাস করার জন্য অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ কোর্সে এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টার ও তেরোটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তিনি একটিতেও অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু তার পক্ষে এখন পর্যন্ত আটজন নারী পরীক্ষা দিয়েছেন। সবাই সবকিছু জানলেও ভয়ে কেউ কিছু বলেননি।
পরীক্ষার হলে সংসদ সদস্যের রোল নাম্বারের সিটে বসা পরীক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন তার নাম তামান্না নুসরাত বুবলী। পরে তার আইডি কার্ড আছে কি না জানতে চাইলে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, তার সাথে আইডি নেই। পরে ওই প্রতিবেদক পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেন, তামান্না নুসরাত বুবলী একজন সংসদ সদস্য। তিনি এই সিটে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তখন ওই পরীক্ষার্থী নিজেকে সংসদ সদস্য বলে দাবি করেন।
তবে কক্ষ পরিদর্শক জানিয়েছেন, ওই পরীক্ষার্থী দাবি করেছেন তার আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে। সে জিডির কপি নিয়ে এসেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়েছে। এ দিকে বিএ পরীক্ষায় অনিয়মের ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষ এমপি বুবলীকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করেছেন।
একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এমপি বুবলীর এপিএস পরীক্ষার দিন বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ চত্বরে এসে বসে থাকত। তাকে সহযোগিতা করত স্থানীয় চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের একজন সচিব। স্থানীয় লোকজন এসব ঘটনা জানলেও মুখ খুলতে সাহস পেত না। এমপি বুবলীর নাম্বারে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।