Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ শনিবার, জুলাই ২০২৫ | ২১ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করা সেই এসিল্যান্ডকে স্ট্যান্ড রিলিজ, চাকরি পাচ্ছেন ছেলে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০১:০৭ PM
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০১:০৭ PM

bdmorning Image Preview


মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করার ঘটনায় দিনাজপুর সদরের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) আরিফুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিস।

এদিকে আজ সকালে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবর জিয়ারত করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এ সময় মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূর ইসলামকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম হাসপাতালে একটি চাকরির ঘোষণা দেন তিনি। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এস এম তরিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি জিপ গাড়ি উপহার দিয়েছেন দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম হাসপাতালে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গাড়িটি হাসপাতালে চলে আসলে সে গাড়িটিই চালাবেন নূর ইসলাম।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মানের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এর আগে এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জয়নুল আবেদিন ও সদর এসিল্যান্ডকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছিল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বরাবর একটি চিঠি লেখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন।

চিঠিতে যা লিখে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন-

‘গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের সুপারিশে ছেলে নূর ইসলামের নো-ওয়ার্ক নো-পে ভিক্তিতে এসিল্যান্ডের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হয়। সেই সুবাদে নূর ইসলাম সদরে এসিল্যান্ডের গাড়ি চালাতেন। কর্মস্থলে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হুইপ ইকবালুর রহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে সেখানে উপস্থিত এডিসি রাজস্বকে বিষয়টি দেখতে বলেন। হুইপকে বিষয়টি অবগত করায় প্রশাসন থেকে প্রথমে নূর ইসলামকে তার বসবাসরত খাস পরিত্যক্ত বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। একই মাসের শেষ দিকে এসিল্যান্ডের স্ত্রী নূর ইসলামকে শৌচাগার পরিষ্কার ও মাংস রান্না করতে বলেন। মাংস রান্না ঠিক না হওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়।

পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়াকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনিও (ডিসি) ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এ ছাড়াও নূর ইসলাম তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাফ চাওয়ার জন্য এসিল্যান্ডের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা দেখা করতে পারেনি। চাকরি চলে যাওয়ায় উপায় না পেয়ে হুইপ ইকবালুর রহিমের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু প্রশাসন সেটি চরম নেগেটিভভাবে নেয়। বর্তমানে তার ছেলেটি চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত হয়ে স্ত্রী-পুত্র ও পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে করা স্বাধীন দেশে আমার ছেলের রুজি রোজগারটুকুও অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হলো। গত ২১ অক্টোবর থেকে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল দিনাজপুরের কার্ডিওলজি বিভাগে, ওয়ার্ড নম্বর -২, বেড নম্বর-৪৪ এ ভর্তি অবস্থায় আছি, এই পত্রটি তোমার কাছে লিখছি। তোমার কাছে আমার আকুল আবেদন- ‘তুমি ন্যায় বিচার করো। ঠুনকো অজুহাতে আমার ছেলেটিকে চাকরিচ্যুত করায় তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।

আমার বয়স প্রায় ৮০ এর কাছাকাছি। ছেলেটি হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত হওয়ায় আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ তারপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না।’

এ কারণে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অফ অনার) ছাড়াই তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। শেষ বিদায়ের সময় সেখানে বাজেনি বিদায়ের সুর। জানাজার আগে ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের চৌকস দল গার্ড অব অনার জানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়নি।

Bootstrap Image Preview