এমভি ইয়াদ জাহাজের ধাক্কায় পায়ের পাতা কাটা পড়া আট বছর বয়সী শিশু জাইমা নেওয়াজের চিকিৎসাসহ তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তার চিকিৎসার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে তিন লাখ টাকা দিতে লঞ্চ মালিক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং শিশুটির বাবার পক্ষে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৭ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুরের রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আনিসুল হাসান ও শাহীনুজ্জামান শাহীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘আদালত রুল জারি করে চিকিৎসার জন্য শিশু জাইমার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে তিন লাখ টাকা দিতে সাত থেকে ১২ নম্বর বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে শিশু জাইমা নেওয়াজের চিকিৎসাসহ তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত।’
ঘটনার সময় ওই শিশুর বয়স ছিল ৬ বছর। এ ঘটনায় রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন নৌপরিবহন সচিব, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, নৌ অধিদফতরের মহাপরিচালক, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, লঞ্চের মালিক মামুনুর রশিদ, প্রথম শ্রেণির মাস্টার আব্দুর রউফ, দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার নাসির উদ্দিন গাজী, দ্বিতীয় শ্রেণির চালক মো. স্বপন, তৃতীয় শ্রেণির চালক মো. ফারুক হোসেন ও ম্যানেজার মনিরুজ্জামান।
‘পালিয়ে বেড়াচ্ছে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পা হারানো শিশু জাইমার পরিবার’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়।
২০১৮ সালের ২২ মার্চ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এমভি ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন অর রশিদ ও তার লোকজনের জীবননাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লঞ্চ দুর্ঘটনায় আহত শিশু জাইমা নেওয়াজ জিসার পরিবার। মামলা তুলে নেয়ার জন্য লঞ্চ মালিক শিশুর বাবা জামাল গাজীকে জীবননাশ, বাচ্চা অপহরণ ও এসিড ছুড়ে সপরিবারে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় শিশু জাইমার মা নাজমুন নাহার বাদী হয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সরোয়ার হোসেনের আদালতে একটি মামলা করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০১৭ সালের) ২৯ ডিসেম্বর ছয় বছরের শিশুকন্যা জাইমা নেওয়াজ জিসা, বাবা জামাল গাজী, মা নাজমুন নাহার ও ছেলে খাঁজা গরীবে নেওয়াজকে নিয়ে ঢাকা থেকে আমতলীতে আসার উদ্দেশে ফতুল্লা লঞ্চঘাটে আসেন। এমভি ইয়াদ লঞ্চটি ফতুল্লা ঘাটে এসে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে পড়ে লঞ্চ ও লঞ্চঘাটের মাঝখানে শিশু জাইমার ডান পা আটকে যায়। তার পায়ের পাতার সম্মুখভাগ বিছিন্ন হয়ে যায়।
তাৎক্ষণিক শিশু জাইমাকে উদ্ধার করে ঢাকা জেনারেল অ্যান্ড অর্থোপেটিক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে ২১ দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে আসে।
এ ঘটনায় শিশু জাইমার বাবা জামাল গাজী বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লঞ্চ মালিক মামুন অর রশিদসহ ছয়জনকে আসামি করে দক্ষিণ কোরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলার পর থেকে শিশুর বাবা জামাল গাজীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য লঞ্চ মালিক ও তার লোকজন জীবননাশের হুমকি, বাচ্চা অপহরণ ও এসিড ছুড়ে সপরিবার মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় আমতলী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সরোয়ার হোসেনের আদালতে শিশুর মা নাজমুন নাহার বাদী হয়ে মামলা করেন।