Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ সোমবার, জুন ২০২৫ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিশু গৃহকর্মী জান্নাতিকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিল রুকসানা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১৭ PM
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১৭ PM

bdmorning Image Preview


ঠিকমতো কাজ করত না, কথা শুনত না। সব সবময় পালিয়ে পালিয়ে থাকত। ঘটনার দিন ২৩ অক্টোবরও সে পালিয়েছিল। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর দুপুর আড়াইটার দিকে ছাদে গিয়ে দেখি, সে লুকিয়ে আছে। তাকে দেখেই মাথা গরম হয়ে যায়। ধরে এনে প্রথমে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় দিই। ছোটাছুটির চেষ্টা করলে চুলের মুটি ধরে তার মাথা ফ্লোরে কয়েকবার আঘাত করি। তারপর বাথরুমে আটকে রেখে বাসার বাইরে চলে যাই। রাতে এসে দেখি তার নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শিশু জান্নাতি (১২) হত্যার এমন রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন আসামি রুকসানা পারভীন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জিজি বিশ্বাস বলেন, আসামি রুকসানা পারভীন একাই শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শিশুটি সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকত, ঠিকমতো কাজ করত না বলে গৃহকর্ত্রীর মাথা গরম হয়ে যায়। ঘটনার দিন বিকেলে শিশুটি তার ভবনের ছাদে গিয়ে লুকিয়েছিল। সেখান থেকে টেন হিঁচড়ে বাসায় নিয়ে এসে শিশুটির মাথা ফ্লোরে একাধিকবার আঘাত করে বাথরুমে আটকে রেখেছিল। তারপর বাসার বাইরে চলে যান ওই গৃহকর্ত্রী। রাতে বাসায় ফিরে দেখেন শিশুটির নাক-মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এই মামলার চার্জশিট শিগগিরই দেওয়া হবে। আশা করছি বিচারিক প্রক্রিয়ায় তার সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত হবে।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলীম জানান, মামলার অপর আসামি রোকসানা পারভিনের স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহম্মেদ পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জান্নাতিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, সে আগেই মারা গেছে। জান্নাতি স্যার সৈয়দ রোডের একটি ছয়তলা ভবনের এক তলায় কাজ করত। ওই ফ্ল্যাটটি পিরোজপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদের। বাড়িতে থাকতেন তার স্ত্রী রোকসানা পারভিন, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে ও বোন । ঘটনার সময় সাঈদ আহমেদ বাসায় ছিলেন।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর শিশু জান্নাতির বাবা মো. জানু মোল্লা মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে গৃহকর্ত্রী রুকসানা পারভীন, তার স্বামী সাঈদ আহম্মেদসহ অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করেন। ঘটনার পরপরই মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ রুকসানা পারভীনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রাজি হলে শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারকের খাস কামরায় নিয়ে যান।

শিশুটির বাবা জানু মোল্লা এজাহারে উল্লেখ করেন, তাদের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী থানার তেলিহাটা ফকিরপাড়া গ্রামে। তার মেয়ে জান্নাতি প্রায় চার বছর ধরে রুকসানা ও সাঈদ দম্পতির কাছে থাকত। সাঈদ আহম্মেদের চাকরিস্থল ছিল বগুড়া। সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সঙ্গে জান্নাতির পরিবারের পরিচয় হয়। সেই সূত্র ধরে জান্নাতিকে এই দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ মোহাম্মদপুরের ৬/৫  স্যার সৈয়দ রোডের দ্বিতীয় তলার এ/১ নম্বর ফ্ল্যাটে কাজ করছিল জান্নাতি। মেয়ের অসুস্থতার খবর দিয়ে রুকসানা তাকে ফোন করেন। পরে গত বুধবার রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তিনি তার মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।  আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। এরপর তিনি মামলা করেন।

জানু মোল্লা জানান, গত ২৩ অক্টোবর সকাল ৬ টার দিকে রুকসানা পারভীন মোবাইল ফোনে জানায়, আমার মেয়ে জান্নাতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে দেখার জন্য ঢাকায় আসতে বললে আমি দ্রুত রওনা দিই। বগুড়া থেকে রওনা হয়ে দুপুর ১২টার দিকে আমি সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে রুকসানা পারভীন আবার মোবাইলে জানান, আমার মেয়ে মারা গেছে। তখন আমি আবার বাড়িতে ফিরে যাই। আমার শ্যালক মনিরুল ইসলাম, ফুপাতো শ্যালক আরিফুল ইসলাম, চাচা শ্বশুর সবুজ মোল্লাসহ পিকআপ যোগে রাত অনুমান তিনটার দিকে ( ২৪ অক্টোবর/ বৃহস্পতিবার) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে  গিয়ে জান্নাতির মৃতদেহ শনাক্ত করি।

আমার মেয়ের কপালের মাঝখানে, মাথায়, নাকের ওপর, গলার ডানপাশে, দুই হাতের বাহুতে, উভয় পায়ের উড়ুতে, তলপেটে আঘাতের চিহ্ন ও ক্ষত দেখতে পাই। তিনি আরও জানান, রুকসানা পারভীন ও তার স্বামী মো. সাঈদ আহম্মেদ আমার মেয়েকে তাদের বাসায় মাঝে-মধ্যেই মারধর করত।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ অক্টোবর বিকেল ৩ টার দিকে আসামিরা আমার মেয়ে জান্নাতিকে মারপিট করে হত্যা করে এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রাত অনুমান ১১টার দিকে আমার মেয়ের মৃতদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। তথায় কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

Bootstrap Image Preview