Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ রবিবার, জুলাই ২০২৫ | ২২ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ফলের ক্ষতিকর মাছি আবিষ্কার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৩৪ AM
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৪০ AM

bdmorning Image Preview


নতুন এক প্রজাতির মাছি আবিষ্কার হয়েছে বাংলাদেশে। ফলের মাছির পরিবারে নতুন এই প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে ‘জিওগোডাকাস মধুপুরী’ (Zeugodacus madhupuri)। প্রজাতিটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসংবলিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে ট্যাক্সনমিক জার্নালে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই ও আইডাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সহায়তায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের আওতাধীন কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের একদল বিজ্ঞানী গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বে নতুন এই প্রজাতির মাছি আবিষ্কার করেছেন। টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানে প্রজাতিটি আবিষ্কার হওয়ায় এটির নামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ‘মধুপুরী’। এর বাইরে আরো একটি অতি বিষাক্ত প্রজাতির ফলের মাছিসহ গত আট বছরে নতুন ৩০ প্রজাতির ফলের মাছি শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে।

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আফতাব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আবিষ্কারটি নতুন এক দিগন্ত তৈরি করেছে। নতুন ফলের মাছিটিও অন্যান্য ফলের মাছির মতোই ক্ষতিকর। তবে এখনো এটির ব্যাপক বিস্তার ঘটেনি। তাই এ মুহূর্তেই এটি নিয়ে  উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।

ওই গবেষক বলেন, তবে মধুপুরী বিশ্বে নতুন হলেও পুরনো আরেকটি প্রজাতির ভয়ংকর মাছিও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। ব্যাকট্রোকেরা ক্যারাম্বোলিব (Bactrocera carambolaeb)  প্রজাতির মাছিটি এই উপমহাদেশে বাংলাদেশেই প্রথম শনাক্ত হল। মাছিটি সাধারণত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশে কামরাঙা, আম, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

সূত্র জানায়, ডিপটেরা বর্গের টেফ্রিটিডি গোত্রের পতঙ্গগুলোকে ফলের মাছি বা ফ্রুট ফ্লাই নামে অভিহিত করা হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ফলের মাছির সংখ্যা ছিল সাতটি। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের আওতাধীন কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা ২০১৩ সাল থেকে হাওয়াই ও আইডাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে দেশে ফলের মাছির প্রজাতি বৈচিত্র্যের ওপর নিবিড়ভাবে গবেষণা শুরু করেন।

তাঁরা দেশের ৬৪ জেলায় জরিপ করে ২০ প্রজাতির নতুন কান্ট্রি রিপোর্টসহ এ পর্যন্ত ২৭ প্রজাতির ফলের মাছির উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। নতুন প্রজাতির ফলের মাছির সন্ধানে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোতে জরিপ শুরু করলেও গত বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত কোনো নতুন প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেননি।

তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানের দোখলা রেঞ্জ থেকে ড. আফতাব হোসেন কিউলিউর ট্র্যাপে চারটি নতুন ধরনের ফলের মাছির সন্ধান পান। তিনি মাছিগুলোকে ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পান, এগুলো জিওগোডাকাসভুক্ত হলেও এদের আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। পরে তিনি প্রজাতি শনাক্তকরণের জন্য মাছিগুলো আইডাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম এফ বার এন্টোমোলজিক্যাল মিউজিয়ামের কিউরেটর ড. লুক লেবাংকের কাছে পাঠান।

ড. লেবাংক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে এগুলোর মধ্যে একটি নতুন প্রজাতির ফলের মাছি রয়েছে। পরে মলিকুলার নিশ্চয়তার জন্য ওই মাছির একটি পা কেটে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যলয়ের প্লান্ট প্রটেকশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. ড্যানিয়েল রুবিনফের কাছে পাঠান। সেখানেও পরীক্ষায় প্রমাণ মেলে—ফলের মাছিটি বিশ্বে নতুন প্রজাতির। প্রজাতি শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা পরামর্শ করে প্রাপ্তিস্থানের নামের সঙ্গে মিল রেখে ‘জিওগোডাকাস মধুপুরী’ নামকরণ করেন। ট্যাক্সনমিক জার্নালের গত সেপ্টেম্বর সংখ্যায় ‘জুকিস’ শিরোনামে এটি প্রকাশ করা হয়।

ড. আফতাব বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে কেবল নতুন প্রজাতির মাছিই আবিষ্কার হয়নি, বাংলাদেশের ফলমূল ও শাকসবজির পেস্ট রিস্ক অ্যানালাইসিস (পিআরএ) ডকুমেন্ট হালনাগাদ করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ন্যাশনাল ডকুমেন্টটি যেকোনো দেশের ফলমূল ও শাকসবজি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Bootstrap Image Preview