বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার একদিন আগেই তাকে মারার পরিকল্পনা করা হয়। আবরার হত্যাকাণ্ডের আগের দিন শনিবার দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাক মেহেদি হাসান রবিন তাদের সিক্রেট ফেসবুক গ্রুপে (এসবিএইচএসএল ১৬+১৭) আবরারকে মারার নির্দেশ দেয়।
নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন রোববার সন্ধ্যায় আবরার ফাহাদ হলে ফিরলে রাত ৭টা ৫২ মিনিটে মনিরুজ্জামান সিক্রেট মেসেঞ্জারে সবাইকে নিচে নামতে বলে। এরপর শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে শিবির সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সারারাতই সিক্রেট গ্রুপে আবরারকে নির্যাতনের বর্ণনার আপডেট দিতে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আবরার হত্যা অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টি ও ঘটনার মোটিভ সর্ম্পকে জানতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
এদিকে, আবরার হত্যা জড়িত অভিযোগে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা, রুমমেট মো. মিজানুর রহমান এবং এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই নিয়ে আবরার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ জনে।
বুয়েট ছাত্রলীগের ফেসবুকের সিক্রেট গ্রুপে কথাপকোথনে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং হত্যাকাণ্ডের সময়কার চিত্র ফুটে উঠেছে। কথাপোকোথনে স্কিনশর্ট গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসেছে। সেখানে দেখা যায়-শনিবার দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে মেহেদি হাসান রবিন মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে মারার নির্দেশ দেয়।
আবরার হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সেদিন রাত ১২টা ২৩ মিনিটে আশিকুল ইসলাম বিটু ২০১১ নম্বর রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। এর প্রায় ৭ মিনিট পর তিনি বেড়িয়ে যান। ওই রাতে কী ঘটেছিল শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে জানতে চাইলে বিটু জানিয়েছিল, মনির, জেমি আর তানিমকে ফোন দিয়ে বলে আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে আনতে। পরে দেখলাম ২ জন ওর ফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে। পরে ১২.৩০ এর দিকে আমি আবার আমার ল্যাপটপ ও বই নিতে রুমে এসে দেখি আবরার একদম মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে। সেখানে আবরার এর ব্যাচেরও ৭-৮ জন ছিল।
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় তার রুমমেট মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ নিয়ে আলোচিত এ মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হল। তাদের মধ্যে চারজনের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। এজাহারে নাম না থাকলেও তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সে কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথম দফায় গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ‘তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে’ ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।