বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে রোববার নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় আবরার ফাহাদকে।
এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গন। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ সাত দফা দাবিতে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার (৭ অক্টোবর) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়েছিল প্রসাশনের পক্ষ থেকে। তবে সেই ভিডিওটি ছিল অপূর্ণাঙ্গ।
পরের দিন মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে আবরারের মরদেহ হলের গেইটে নিয়ে আসা হয়। তারপর চিকিৎসক (সাদা পাঞ্জাবি পরা) আবারারের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এসময় সেখানে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
৩টা ২২ মিনিটে স্ট্রেচারে রাখা আবরারের নিথর দেহ গেইটের আরও কাছে আনা হয়। তার কিছু সময় পর ৩টা ২৫ মিনিটে হল প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান সেখানে আসেন। তারা মেহেদী হাসান রাসেল ও শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকারের সঙ্গে কথা বলেন।
আবরারের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও খুনিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ থাকেন হল প্রভোস্ট ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক।
জানা গেছে, তিন দফায়, বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয় আবরারকে। এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলো ২২ ঘাতক।
শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে রাত নয়টার দিকে শুরু হয় মারপিট। নেতৃত্বে দেয়া ইফতি মাহবুব সকাল। তিন দফা পেটানো হয় আবরারকে।
কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মারধর শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন। পরে যোগ দেন আরও পাঁচজন। এরা হলেন- অনিক, সকাল, জিওন, মনির ও মোজাহিদুল।
প্রথম দফা মারপিট চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এরপর রাতের খাবার খাওয়ানো হয় আবরারকে। খাওয়ানো হয়, ব্যাথানাশক ট্যাবলেট, দেওয়া হয় মলম।
দ্বিতীয় দফায় মারপিট শুরু করেন অনিক, ছিলেন সবচেয়ে মারমুখী। আবরারের শরীরের উপর ভাঙেন ক্রিকেট স্ট্যাম্প। মদ্যপ অনিক আরেকটি স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর চালিয়ে যান।
নিস্তেজ হয়ে পড়েন আবরার। তখন মধ্যরাত। বার বার বমি করেন। ঘাবড়ে যান ঘাতকরা। আহত শরীরটাকে এবার টেনে বড় ভাই মুন্নার কক্ষে নেন তারা।
সূত্র বলছে, তৃতীয় দফার মারপিট শুরু হয় মুন্নার কক্ষেই। ছয় জনের পিটুনিতে লুটিয়ে পড়ে আবরার। এরপর নীথর দেহটি টেনে হিচেড় নিচে নামানোর চেষ্টা করেন ঘাতকরা।
মাঝ সিড়িতে যেতেই তারা বুঝতে পারেন আবরার মারা গেছে। সেখানেই আবরারের মরদেহটি রেখে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। নীথর দেহটি পড়ে থাকে সিঁড়িতে।