বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার পর তিনি আবরার হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের পর এ মন্তব্য করেন।
তার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে বুয়েট চত্বরে আসেন। এ সময় আন্দোলনরত ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানান।
এ সময় বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্যার, যে ঘটনা ঘটলো ক্যাম্পাসে। তাতে আপনি ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেবেন কিনা।’ এরপর অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের এ প্রশ্নের জবাব দিলে তা সন্তোষজনক না হওয়ায় তোপের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেন, ‘আমি মনে করি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই।’
দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই।’
এরপর শিক্ষার্থীরা করতালি দিয়ে তার এ মন্তব্যকে স্বাগত জানান। বুয়েট উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে অনুরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
আবরার হত্যার বিচার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার বিচার দাবিতে আট দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-আবরার হত্যার বিচার দ্রুত টাইব্যুনালে করতে হবে। হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফাঁসি দিতে হবে। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া প্রশাসনের জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
গত রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গতকাল সোমবার বুয়েট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আবরারের। এরপর আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টায় কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের আল-হেরা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ১০টায় কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে আবরারের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আবরার ফাহাদ।