বিশ্বব্যাপী চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব; সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অতি প্রাচীন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এবার ভারতে যাতে কোনোভাবে পরিবেশ নষ্ট না হয় সে জন্য এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে কর্তৃপক্ষ। পরিবেশ সুরক্ষায় ঐতিহাসিক গঙ্গা নদীতে এবার প্রতিমা বিসর্জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন। তাছাড়া দশেরা, দীপাবলি, ছট, সরস্বতী পূজাতেও নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হবে।
যার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের মোট ১১টি রাজ্যকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও পাঠিয়েছে দিল্লি সরকার। যেখানে বলা হয়, গঙ্গা বা তার কোনো উপনদীতে প্রতিমা বিসর্জন করা যাবে না। নির্দেশটি অমান্য করা হলে সংশ্লিষ্টদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
কর্তৃপক্ষের বরাতে এক প্রতিবেদনে গণমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানায়, কেন্দ্র থেকে পাঠানো এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন দুর্গাপূজার উদ্যোক্তারা। যদিও সরকারের এই নির্দেশনায় সরাসরি দুর্গাপূজার কথা বলা নেই, তবে দশেরার কথা উল্লেখ থাকায় বর্তমানে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্র সরকার থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত ১৫ দফা নির্দেশনা পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, ছত্তিসগড়, রাজস্থানে পাঠানো হয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘দিল্লি থেকে আমার কাছে এমন কোনো চিঠি কিংবা নির্দেশনা আসেনি।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানায়, গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনসহ বিভিন্ন বর্জ্য ফেলাকে ঠেকাতে নির্দেশনাটি যাতে কঠোরভাবে পালন করা হয়, এবার সেদিকে তীব্র নজর রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলো ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে ব্যাপারে উৎসব শেষে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনাটি ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসকদেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, গঙ্গার পানি ও সেখানকার জীববৈচিত্র্য বর্তমানে ঠিক কতটা বিপদগ্রস্ত, তাছাড়া অতিরিক্ত দূষণের ফলে নদীর বিবর্তন কতটা হয়েছে? চলতি বছরের শুরুর দিকে জুলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা কৈলাস চন্দ্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
যেখানে বলা হয়, দূষিত পানির পাশাপাশি গঙ্গা দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য। বিশেষত মাইক্রো প্লাস্টিক। যা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য সংকট সৃষ্টি করছে। তাছাড়া দূষণের ফলে গঙ্গার প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বহু গাঙ্গেয় জীব- বিশেষত শুশুক, ডলফিন, কচ্ছপসহ বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব পুরোপুরি বিপন্ন হয়ে পড়েছে।