শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ভিসিদের অনেকে নিজের পদের অপব্যবহার ও অসদাচরণ করছেন। তারা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, এখন নিয়োগ নীতিমালা সহজ করার কথা আসছে। কিন্তু যাদের কারণে উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের পর্যায়ে গেলো ভবিষ্যতে তাদের মতো কেউ ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাবেন না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? সহজ করে দেয়ার কথা আসছে। কিন্তু এটা করে দিলে যে এর ‘অ্যাবিউস’ (অপব্যবহার) করা হবে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব কথা বলেন। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দীপু মনি বলেন, ভিসিদের নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অনেক ভালো ভালো কথা হয়েছে। এই একজন বললেন যে, ভিসি হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি লজ্জা পান। ভিসিদের নিয়ে যেসব অপ্রীতিকর কথা হয়েছে সেসব কী পত্রিকার তৈরি? ভিসিরা অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু আইন মেনে না চললে এমন ভিসির দরকার নেই।
তিনি বলেন, কেউ কেউ (নিয়োগে) চাপ প্রয়োগের কথা বলেছেন। কারা চাপ দেয় তাদের আমরা চিনি। চাপ বন্ধ করার জন্য কী করতে হয় তা আমরা জানি। আপনারা চিন্তা করবেন না। স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা, মান-সম্মান, নিয়ম-কানুন ও আইনের মধ্যে থেকে কাজ করলে ২০০ শতাংশ সহায়তা পাবেন। যদি আইন মানা না হয় তাহলে আমরা বলবো স্যরি। ভিসিদের কেউ যদি ভাবেন যে, আমি আমার মতো কাজ করবো, আমি রাজা; তাহলে সহযোগিতা দূরে থাক তাদের বলবো, স্যরি। আর আইনের মধ্যে থাকলে আপনাতের সঙ্গে আমরা ষোল আনা আছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাজ আমাদের চেয়ে একেবারে ভিন্ন নয়। আমরাও একই কাজ করি। আপনারা বুঝদার নন তা নয়। ইউজিসিতে যারা আছেন তারাও আপনাদের মানুষ। দু’দিন পর ওখানে আপনাদের মধ্য থেকেই কেউ আসবেন। ভিসিরা ফোন দিলে আমি সম্মানিত বোধ করি। আপনাদের কাছে আমরা অনেক কিছু প্রত্যাশা করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য নির্ধারিত ও ঘোষিত আছে। সেখানে জাতিকে নিয়ে যেতে হবে। তাই শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। শিক্ষার ব্যাপারে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষের ভুল হতে পারে। কিন্তু ভালো করার জন্য চেষ্টায় ত্রুটি থাকবে না বলে আশা করি।
দেশের ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ নানা অভিযোগের পরিপেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বৈঠক ডাকে। এতে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
ভিসিদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, শেরেবাংলা বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি লুৎফুল হাসান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইমরান কবির চৌধুরি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যাল ভিসি মোস্তাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বক্তব্য দেন। ভিসিদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকটি শুরুর ২ ঘণ্টা পর মুলতুবি করা হয়। পরে আবার ভিসিদের নিয়ে বসার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
বৈঠক শুরুর দিকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কামালউদ্দিন আহমদ দাবি করেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে খবর আসলে বিশেষ করে বিপক্ষে খবর আসলে সেই সাংবাদিকের ব্যাকগ্রাউন্ড কি সেটি জানতে হবে। দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার পায়তারা আছে কিনা। আমরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী।
শেষ বক্তা মুনাজ আহমেদ নূর অত্যন্ত কঠোর ভাষায় প্রস্তাবিত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার সমালোচনা করছিলেন। এ সময় তিনি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তুলে ধরছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী এর জবাব দেয়ার চেষ্টা করলেও ভিসি তা উপেক্ষা করছিলেন। একটি পর্যায়ে তাকে থামিয়ে দেয়া হয়।