Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ শনিবার, জুন ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

জেল থেকে বেরিয়েই ফের অপকর্মে লিপ্ত ‘রাজাকার পুত্র’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০৫ PM
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের জার্সি পড়ে সেই সরকারদলীয় সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ভূমিদস্যুতাসহ গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাগেশ্বরী উপজেলার কুটিপয়ড়াডাঙ্গা গ্রামের হাফিজুর রহমান বাবুর বিরুদ্ধে।

তার এই অপকর্মসমূহের একান্ত সহযোগি হিসেবে কাজ করে তারই ভগ্নিপতি আবুল হাশেম ও গ্রামের একটি অপরাধী চক্র।

সম্প্রতি নানা অপকর্মের কারণে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। তার অপকর্মের অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও বেকায়দায়। জেল হাজত থেকে বের হয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য নিজেকে আওয়ামীলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে হাফিজুর রহমান বাবু কুখ্যাত রাজাকার মৃত শাহজাহান আলী ব্যাপারীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, হাফিজুর রহমান বাবুর পিতা মৃত শাহজাহান আলী ব্যাপারী গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার করেছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন। বর্তমানে তার ছেলে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ অত্র গ্রামের আপেল, ফারুক ও সরুকে নিয়ে গোটা উপজেলায় বিভিন্ন অপকর্মসহ গ্রামবাসীর উপর বিভিন্ন কায়দায় অত্যাচার চালাচ্ছে, যা স্থানীয় প্রশাসন অবগত আছেন।

গ্রামের নুর মোহাম্মদ জানান, হফিজুর রহমান বাবু তার ১.৫৬ শতক জমি জবর দখল করে খাচ্ছে। শালিস বৈঠকে সবাই জমি ফিরিয়ে দিতে বললেও সে এখন পর্যন্ত ফেরত দেয়নি বরং দিনের পর দিন প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে আসছে। এতে আমি ও আমার পরিবারের সকল সদস্য আতংকে রয়েছি। গ্রামের ইয়াকুব আলী জানান হাফিজুর রহমান বাবু একজন টাউট, বাটপার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জাল স্বাক্ষরকারী এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতকারী। হাফিজুর রহমান বাবু, ফারুক, আপেলের চক্রান্তে আপেলের মামা জাকারিয়াকে গ্রামাবাসীর কাছে পল্লী বিদ্যুতের বড় কর্মকর্তা সাজিয়ে গ্রাম থেকে প্রায় ৭-৮ লক্ষাধিক টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এই অপরাধ চক্রটি গ্রামে বিদ্যুত আনতে না পারলে গ্রামবাসী হাফিজুর রহমান বাবুসহ জাকারিয়াকে উত্তম-মধ্যম দেয়। পরবর্তীতে অত্র গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে সরকারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় গ্রামে বিদ্যুত নিয়ে আসে। যেহেতু গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে গ্রামে বিদ্যুত নিয়ে আসে এখন টাকা ফেরত দিতে হবে বলে গ্রামে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করে বাবুসহ উক্ত চক্রটি প্রায়ই সময় গ্রামে একটার পর ঝামেলা বাঁধিয়ে রাখে।

আমরা গ্রামবাসী স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে তার কু-কর্মের কথা জানিয়েছি। বর্তমানে ফারুক ও আপেলদের বাড়িতে বসে তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গ্রামবাসীকে হয়রানী করার জন্য সাংবাদিক সাইফুর ও হাফিজুর রহমান হৃদয়কে দিয়ে মিথ্যা ও ভুয়া সংবাদ প্রকাশিত করে গ্রামবাসীর নিকট চাঁদাদাবি করে। হাফিজুর রহমান বাবু সম্প্রতি জেল থেকে বের হয়ে সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রামবাসীকে অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে হাফিজুর রহমান বাবু, আপেল, ফারুকসহ সাংবাদিক সাইফুর ও হৃদয় নাগেশ্বরীর মিহা ডিজিটাল স্টুডিও এর মালিক মিজানুর রহমান মিজানের সাথে যোগসাজসে কুটিপয়ড়াডাঙ্গা গ্রামের লোকদের ছবি এডিট করে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক চারিদিকে প্রতিদিন পত্রিকার নাম ব্যবহার করে লিফলেট আকারে ভুয়া সংবাদ প্রচার করছে।

উক্ত বিষয়ে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে হাফিজুর রহমান, আপেলসহ তার কতিপয় সন্ত্রাসী ব্যক্তি গ্রামবাসীকে এইবলে হুমকি দেয় যে, আমরা সরকার দলীয় লোক, আমরা সাংবাদিক, বেশি কথা বললে আরও সংবাদ প্রচার করব। তখন মানসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবি না। গ্রামের ইউনুছ আলীর পুত্র নুর আমিন জানান, হাফিজুর রহমান বাবু, আপেল, ফারুক মিলে আমার বাবাকে মিথ্যা স্বাক্ষী বানিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে। এখন আবার আমাদের গ্রামবাসী, ভাই ও চাচাদের নামে মিথ্যা সংবাদ ও ছবি এডিট করে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে আমাদের গ্রামবাসীর মধ্যে বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে এবং গ্রামের মান্যগণ্য ব্যক্তিদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার বাবা ও গ্রামের বেশকিছু লোকজনের স্বাক্ষর জাল করে গ্রামের সম্মানী লোকদের নামে ভুয়া অভিযোগপত্র সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে আমরা প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ সংবাদ প্রকাশ করেছি। আমরা গ্রামবাসী সাংবাদিক সাইফুর ও হৃদয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় হাফিজুর রহমান বাবু, আপেল ও ফারুক তাদেরকে গ্রামবাসীর ভুয়া স্বাক্ষরযুক্ত অভিযোগপত্র দিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে সংবাদ প্রকাশ করেছে এবং আপেলদের বাড়িতে সাংবাদিকসহ গ্রামের কয়েকজন সহজ সরল ব্যক্তিদেরকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নাটক তৈরি করে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করেছে। আমরা তখন বুঝতে পারিনি।

২০০৭ সালে হাফিজুর রহমান বাবুর অপকর্মের বিরুদ্ধে দৈনিক খবরপত্র পত্রিকায় দেখা যায়, গ্রামের ইয়াছিন আলী ও নুর মোহাম্মদ অভিযোগ করেন রাজাকার পুত্র হাফিজুর রহমান বাবু শাহাজাহানীয়া এবতেদায়ী ও দাখিল মাদ্রাসা স্থাপন করে কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও মাদ্রাসার মাটিভরাটের নামে এমপির কোটা থেকে ২.০০ মে.টন চালসহ গ্রামের বিভিন্ন লোকজনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে গ্রাম থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন । এছাড়াও হাফিজুর রহমান বাবু নিজেকে উপজেলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারীর নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করেন এবং গ্রামের সহজ সরল লোকদের বেকায়দায় ফেলে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি করেন।

মাদরাসা নিয়ে দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের কারণে হাফিজুর রহমান বাবুকে অত্র গ্রামবাসী কয়েকদফা উত্তম-মধ্যম দেন। বর্তমানেও হাফিজুর রহমান বাবু,আপেল ও ফারুককে সাথে নিয়ে কুটিপয়ড়াডাঙ্গা তালীমুল নূরানী হাফিজিয়া মাদরাসা চালানোর নাম করে গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা পয়সা ও চাল তুলে এর সঠিক হিসাব দিতে না পারায় অত্র গ্রামের ঈদগাহ মাঠে গ্রামবাসীর সাথে কয়েক দফা বাকবিতন্ডা হয় এবং গ্রামবাসী তাদেরকে সর্তক করে দেয়। প্রতিরাতেই আপেলদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণির অসাধু লোকজন আসে এবং তারই প্রেক্ষিতে সরকারে উন্নয়ন কাজে বাধাঁর সৃষ্টি করে, যা গ্রামবাসী সকলেই জানে। গ্রামবাসী সকলেই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে তারা আবার নতুন করে কোন জঙ্গী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত কিনা।

গ্রামবাসী বর্তমানে বাবু আতংকে রয়েছে। গ্রামবাসীর প্রশ্ন হাফিজুর রহমান বাবু, আপেল, ফারুক ও সরু গ্রামে এত অত্যাচার করছে প্রশাসন জানে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছে। তাহলে কোন শক্তির বলে তারা বারবার গ্রামবাসীকে অনবরত অত্যাচার করছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় হাফিজুর রহমান বাবু দীর্ঘদিন যাবত নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এর সঠিক বিচার হওয়া উচিত।

এখনও সে গ্রামের লোকদের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে, গ্রামের মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গের ছবি এডিট করে বিভিন্ন পত্রিকার নাম ব্যবহার করে লিফলেট আকারে গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে, বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি করছে ভবিষ্যতে আরও বড়ধরনের বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টির আশংকায় গ্রামবাসী আতংকে রয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রামবাসী বর্তমান সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করছে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাফিজুর রহমান বাবুর সকল অপকর্মের বিষয়ে অবগত আছেন এবং আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Bootstrap Image Preview