গত আট মাসে আট দিনও অফিস না করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডা. ফারজানা আফরোজ ঝুমার বিরুদ্ধে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তিনি তার দায়িত্ব পালন করেন না, ব্যস্ত থাকেন অন্য কাজে। প্রভাবশালী স্বাচিপ নেতার সহধর্মিণী হওয়ায় রয়েছে সে দাপট।
জানা যায়, তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) একজন প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতার সহধর্মিণী। সে প্রভাবেই তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটিতে আরপির মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি হয়ে আসেন। তবে প্রথম থেকেই তার বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্ব না পালন করার অভিযোগ।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোনো বিষয়ে কাউকে গ্রাহ্য করেন না। হাসপাতালে নিয়মমাফিক উপস্থিত হলেও তার নির্দিষ্ট কক্ষে বসে রোগীদের চিকিৎসা দেন না। নির্দিষ্ট কক্ষে এসেই চলে যান এবং তার অন্তর্গত মেডিক্যাল অফিসাররা সব দায়িত্ব পালন করেন।
এই পদটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে হৃদরোগ হাসপাতালের সাবেক একাধিক আরপি জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে যত রোগী আসে সবার ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব আরপির। বলা হয় হাসপাতালের পরিচালকের পরই এ পদটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কোনো বদলি রোগী কিংবা বহির্বিভাগে যত রোগী আসবে তাদের সবার চিকিৎসার দায়িত্ব আরপির।
রোগী ভর্তি হলেও এই আবাসিক চিকিৎসকের মাধ্যমে হবেন। এক্ষেত্রে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা লাগলেও তা এই চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারেই হবে। এক্ষেত্রে এখানে আরও মেডিক্যাল অফিসার সহযোগী হিসেবে কর্মরত থাকেন।
তাছাড়া প্রশাসনিক আরও দায়িত্ব রয়েছে আবাসিক চিকিৎসকের। রোগী ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন বরাদ্দ দেওয়ার কাজ করেন তিনি। জরুরি ওয়ার্ডের ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ, তার অন্তর্গত সব চিকিৎসকের বরাদ্দ দেওয়াসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার কাজে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে সরাসরি দায়িত্ব পালন করেন এই আরপি বা আবাসিক চিকিৎসক। এসব কারণেই এ পদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. ফারজানা আফরোজ ঝুমার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তিনি তার দায়িত্ব তার অন্তর্গত মেডিক্যাল অফিসারদের দিয়ে করান। যে কারণে প্রায়ই জরুরি মুহূর্তে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবাসিক চিকিৎসকের নির্ধারিত কক্ষে ডা. ফারজানা আফরোজ ঝুমা উপস্থিত নেই। তার কাজটি করে যাচ্ছেন নিয়োজিত মেডিক্যাল অফিসাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিক্যাল অফিসার জানান, মাঝে মধ্যে জরুরি রোগীদেরও দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখতে হয়। কেননা বিভিন্ন ধরনের রোগী আসেন যাদের রোগের চাহিদানুসারে যে জিনিসটা প্রয়োজন তা হাসপাতালের বরাদ্দ থাকলেও উনি না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন ওনার জন্য অপেক্ষা করতে হয় বা রোগীদের স্বজনদের ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফারজানা আফরোজ ঝুমা বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা। আমি গত আট মাস যাবত এখানে কর্তব্যরত। আমি নারী আরপি বলে কেউ আমাকে পছন্দ করছে না। এটা আমাদের সামাজিক সমস্যা। নারীদের অন্তর্গত থেকে কাজ করতে চায় না কেউ।
‘এটাকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রই বলবো। কেননা প্রতিদিন আমি অফিস করছি। এমনকী অতিরিক্ত সময় ধরেও দায়িত্ব পালন করি। আমার তো অনেক কাজ থাকে। অনেক সময় আমাকে রুমে পাওয়া যায় না হয়তো। তাই বলে দায়িত্বে অবহেলা করছি না।
তিনি আরও বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর আমি আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের সদস্য সচিব হিসেবে পরিচালকের দপ্তরে নিয়োগ সংক্রান্ত জরুরি কাজ করছিলাম। আমি নিয়মিত অফিস করি। একই সঙ্গে প্রতিদিন ইভিনিং ও নাইট শিফটে হাসপাতালে উপস্থিত থেকে চিকিৎসা কাজের তদারকি করি।
আরপি পদটি একটি প্রশাসনিক পদ, তাই প্রতিনিয়তই চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। জরুরি রোগীদের বসিয়ে রাখার কোনো অবকাশ নেই, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় নি।