Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ রবিবার, জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

উখিয়ায় হচ্ছে দেশের প্রথম ‘উন্মুক্ত কারাগার’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৭:২০ PM
আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৭:২০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


কারাগারের কথা শুনলেই চার দেয়ালে ঘেরা বন্দিজীবনের কথা মনে হয়। স্বজন, চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন এক জীবন। বন্দী কারাগার এবার ‘উন্মুক্ত’ হচ্ছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বড়বিল গ্রামে বাস্তবে রূপলাভ করছে উন্মুক্ত কারাগার। 

এই কারাগার হবে মূলত সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনকেন্দ্র। ১৬০ একর জমির ওপর গড়ে উঠবে এই কারাগার। আগামী জুন মাসে এর নির্মাণকাজ শুরু হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

মালয়েশিয়ার উন্নত কারাগারের আদলে উখিয়া উপজেলার বড়বিল গ্রামে নির্মাণ করা হবে বহুল প্রত্যাশিত এ কারাগার। এ সংক্রান্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণে ১৬০ একর খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠির বরাত দিয়ে তিনি জানান, কারা অধিদপ্তরের আবেদন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সুপারিশে উখিয়ার পাগলির বিল মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিএস ৮০৩ নম্বর দাগের ১৬০ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ার সিআরপির আদলে লঘু অপরাধে দন্ডিত অপরাধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ কারাগার হবে মুলত সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনকেন্দ্র। উন্মুক্ত কারাগারে বন্দীরা কারাগারের সীমানার মধ্যেই থাকবেন। তবে কাজের জন্য তারা বাইরে যাওয়া-আসার সুযোগ পাবেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন কারাগার রয়েছে।

কারা মহাপরিদর্শক একেএম মোস্তফা কামাল পাশা জানান, এটি একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। দুর্গম এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণচিত্র পাল্টে যাবে। গ্রামে শহরের ছোঁয়া লাগবে। উন্মুক্ত কারাগারের বন্দীরা যেমন সংশোধন ও পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন, তেমনি গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হবে।

কারাগারের ভেতরেই স্থাপন করা হবে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। বন্দীরা সেসব কারখানায় কাজ করতে পারবেন। আবার কিছু বন্দীর জন্য কারাগারের বাইরেও কাজ করার সুযোগ থাকবে। তারা সকালে কাজের জন্য বাইরে যাবেন, কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন।

উন্মুক্ত কারাগার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার রীতেশ চাকমা বলেন, নির্ধারিত সাজার অর্ধেকের বেশি সময় যেসব বন্দী পার করেছেন এবং যারা কারাগারে ভালো আচরণ করেছেন, কেবল তাদেরই উন্মুক্ত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

প্রশিক্ষণে যারা ভালো করবেন, তাদের উন্মুক্ত কারাগারের বাইরেও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এসব বন্দী সকালে কাজের জন্য কারাগার থেকে বেরিয়ে যাবেন, সন্ধ্যায় কাজ শেষে আবার কারাগারে ফিরে আসবেন। কেউ ফিরে না এলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সাল থেকে কয়েক দফা উন্মুক্ত কারাগারের জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শন করেন জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দের নেতৃত্বে উখিয়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও কারা সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১৭ ফেব্রয়ারিতে উন্মুক্ত কারাগারের জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শনে উখিয়ার বড়বিল গ্রামে যান সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

তিনি গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, জেলে থাকা বন্দীরা আমাদের কারও ভাই, বন্ধু বা স্বজন। তাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সরকার উন্মুক্ত কারাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে বন্দীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

Bootstrap Image Preview