Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ বুধবার, জুলাই ২০২৫ | ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষকের বলাৎকারের প্রতিশোধ নিতে মাদ্রাসাছাত্র আবিরকে হত্যা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০২:৫৫ PM
আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০২:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


চুয়াডাঙ্গার জেলার আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা নূরানী মাদ্রাসার ছাত্র আবির হুসাইনকে বলাৎকার ও মাথা কেটে হত্যা রহস্য অবশেষে উন্মোচিত হয়েছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর ও দেশজুড়ে হৈচৈ ফেলে দেয়া এ হত্যাকাণ্ডের জট খুলে যায়।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাদ্রাসাছাত্র আনিসুজ্জামান (১৮), ছালিমির হোসেন (১৭) ও আবু হানিফ রাতুল (১৬) সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিতে এই তিন ছাত্র জানায়, মাদ্রাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ তাদেরকে নিয়মিত নির্যাতন ও বলাৎকার করতেন। তার প্রতিশোধ নিতে প্রথমে ওই শিক্ষককে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। পরে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের ফাঁসিয়ে দিতে তারা আবিরকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে।

তাদের ভাষ্য, শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ গ্রাম থেকে আবিরকে এনে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলেন।

ঘটনার দুদিন পর মাদ্রাসার অদূরের একটি পুকুর থেকে নিহত ছাত্রের মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে পুলিশ মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ ও শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।

পরবর্তীতে মাদ্রাসা সুপার আবু হানিফ ও তামিম বিন ইউসুফকে রিমান্ডে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হত্যার নতুন ক্লু খুঁজে পায়। এরপরই পুলিশ ওই ৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েদা পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল খালেক জানান, রোববার রাতে মাদ্রাসার ছাত্র সদর উপজেলার হানুড়বাড়াদী গ্রামের আনিসুজ্জামান, টেইপুর গ্রামের ছালিমির হোসেন, আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আবু হানিফ রাতুল, আব্দুর নুর ও বলদিয়া গ্রামের মুনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনজন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আবির হুসাইনকে হত্যার কথা স্বীকার করে।

পুলিশ সোমবার রাত ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ মাদ্রাসা ছাত্রকে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে।

এ সময় আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল আদালতের বিচারক সাজেদুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

তিন ছাত্র জানায়, শিক্ষকদের নিপীড়নের প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়ানো হতো। বিষয়টি নিয়ে আমরা পাঁচ ছাত্র শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমরা মাদ্রাসা ছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করি। কারণ আবিরকে গ্রাম থেকে তামিম বিন ইউসুফ স্যারই মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন।

তারা জবানবন্দিতে আরো বলে, ২৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে আমরা পাঁচজন মিলে আবিরকে গল্প করতে করতে মাদ্রাসার পাশের একটি আমবাগানে নিয়ে যাই। এরপর আনিসুজ্জামানসহ আমরা তিনজন তাকে বলাৎকার করি। পরে তাকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করি। হত্যার পর গুজব ছড়াতে আবিরের মাথা শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ছালিমির হোসেন। পরে মাথাটি পাশের পুকুরে ফেলে দিই। এরপর আমরা মাদ্রাসায় ফিরে যাই।

আদালতের বিচারক হত্যার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

উল্যেখ্য, ২৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইনের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদ্রাসার অদূরের একটি আমবাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। ওই দিনই নিহত ছাত্রের মাথা উদ্ধারের জন্য ঢাকা থেকে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও খুলনা থেকে একটি ডুবুরি দল এসে পৌছে। এরপর দিন সকালে পুকুর থেকে আবিরের কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়।

Bootstrap Image Preview