Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শনিবার, জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ৩৯০ কোটি মানুষ’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০১৯, ০৫:৪২ PM
আপডেট: ০২ আগস্ট ২০১৯, ০৫:৪২ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ধারণ করছে ভয়াবহ আকার। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীতে ভরে গেছে হাসপাতালগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের ১২৮টি দেশের ৩৯০ কোটি মানুষ রয়েছে এই ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। 

সংস্থাটি আরো জানায়, বছরে প্রায় ৩৯ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। 

যেসব অঞ্চল ডেঙ্গু আক্রান্ত: 

প্রধানত গ্রীষ্মপ্রধান, আংশিক গ্রীষ্মমন্ডলীয় বা নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। আক্রান্ত হয় শহর ও উপশহরগুলো। এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রতিবছর অনেক মানুষের প্রাণহানির কারণ এই ডেঙ্গু। এছাড়া আফ্রিকা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা ও ভূমধ্যসাগরীয় পূর্বাঞ্চলে ডেঙ্গুর উপস্থিতি রয়েছে।

এশিয়ার মধ্যে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ভারত, বাংলাদেশে প্রায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকো, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও নিকারাগুয়া উল্লেখযোগ্য।

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মূলত নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, ও দ্রুত বর্ধনশীল নগরায়ণ কতটা পরিকল্পিত-অপরিকল্পিত এসবের ওপর।

১৯৫০ সালে প্রথম ডেঙ্গু মহামারি হয়ে দেখা দেয় ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে। এরপর ১৯৭০ সালের দিকে মাত্র ৯টি দেশ মারাত্মক ডেঙ্গুতে ভুগেছে। ২০১০ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২ কোটি ২০ লাখের মতো। তবে ২০১৫ সালের দিকে শুধু আমেরিকা মহাদেশেই ২ কোটি ৩৫ লাখ ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়। সেখানে মারা যায় ১১৮১ জন।

বর্তমান ২০১৯ সালে এটির ভয়াবহতা বেড়েছে বহুগুন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু জ্বরে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় বর্তমানে প্রায় ৩৯ কোটি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

অনেকে সাধারণ জ্বর ও ডেঙ্গু জ্বরের পার্থক্য বুঝতে না পারায় এই সংখ্যা কিছুটা কমও হতে পারে। 

কেমন আছে ইউরোপ? 

ভৌগলিক অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে ইউরোপে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে। তবে ডেঙ্গু রোগীর অস্তিত্ব যে একেবারেই মেলেনি তা নয়। ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ায় ২০১০ সালে ডেঙ্গু রোগী লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া, ২০১২ সালে পর্তুগালের মাদেরিয়া দ্বীপে সনাক্ত করা হয় ২০০ ডেঙ্গু রোগীর। 

২০১৬ ছিল ভয়াবহ, ২০১৯ এও বাজে অবস্থা: 

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৬ সালে। সেসময় শুধু আমেরিকা অঞ্চলেই ২০ লাখের ওপর মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। এরমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ আক্রান্ত ব্রাজিলে। যা ছিল ২০১৪ সালের তুলনায় দেশটিতে তিনগুন বেশি।

অপরদিকে এশিয়ার ফিলিপাইনে ১ লাখ ৭৬ হাজার ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ১ লাখ ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়। এছাড়া আফ্রিকায় বুরকিনা ফসোতেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল পূর্বের চাইতে বেশি।

তবে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০১৭-২০১৮ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। যদিও নিশ্চিতভাবে এর কারণ জানা যায়নি।

২০১৯ সালে এসে আবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে অন্তত ১৪ লাখ ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এরমধ্যে শতকরা ৮৬ ভাগই হচ্ছে ব্রাজিল (১২ লাখ), কলম্বিয়া (৬১ হাজার), নিকারাগুয়া, (৪৬ হাজার) ও মেক্সিকোতে (৩০ হাজার) আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী। ওই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৬ শ ছাড়িয়েছে।

এদিকে ফিলিপাইনে ডেঙ্গুর কারণে ইতোমধ্যে জাতীয় জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে অন্তত ১ লাখ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। মারা গেছেন ৪৫৬ জন।

ইন্দোনেশিয়ার সারা বছরই কমবেশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকে চলতি বছর প্রায় ৩৬২টি শহরে ১০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০০ জন। ২০১৬ সালে সর্বাধিক ২ লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল দেশটিতে, যার মধ্যে ১৫৯৮ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া এ বছর থাইল্যান্ডেও ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫০ জন। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে উপায় কী: 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণ, বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মশার ওষুধ প্রয়োগ-বংশ বিস্তার করতে না দেওয়া ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দিতে হবে।

এছাড়া ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে রোগীর প্রয়োজন চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা একেবারেই কমিয়ে আনা সম্ভব। 

ডেঙ্গু রোধে কলকাতার সাফল্য: 

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতা কিন্তু দারুণ সফল। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে শহরটির সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। আগে কলকাতার কর্পোরেশনগুলো বর্ষা শুরু হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ শুরু করতো। কিন্তু ততদিনে মশা ছড়িয়ে পড়তো পুরো শহরে।

আর তাই বেশ কয়েক বছর ধরে তারা বছরজুড়েই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। আর তার সুফলও পাচ্ছে শহরের অধিবাসীরা। কোথাও পানি জমে না থাকে, শহরের প্রতিটা হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা পরীক্ষাগারে রোগীদের কী কী রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, কী ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, তার হিসাব রাখা হয়। যাতে ডেঙ্গু রোগীর খোঁজ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া যায়।

Bootstrap Image Preview