সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার কানাডার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পর আবার কেন কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেন তিনি?
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসকে সিনহা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত না হওয়াতেই কানাডাকে বেছে নিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ৪ জুলাই স্ত্রীসহ স্থল সীমান্ত দিয়ে কানাডায় প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন তিনি।
সিনহা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এসেই কিন্তু আমি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইনি। এই চিন্তা আমার মাথায়ই আসেনি যে আমি অ্যাসাইলাম নেব। কিন্তু আমার বইটি (এ ব্রোকেন ড্রিম) প্রকাশিত হওয়ার সময় আমার স্ত্রীকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন প্রেশার ক্রিয়েট করলে তখন আমি আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলাম।'
একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে এবং আশ্রয় চাওয়ার কারণগুলোর পেছনে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও আমেরিকা দেড় বছরে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান তিনি।
একপর্যায়ে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও জানান সিনহা। তিনি বলেন, ‘আমার যেহেতু কোনো স্ট্যাটাস ছিল না, আমার কোনো ইনস্যুরেন্স ছিল না।
ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট কিছু বন্ধু বান্ধবরা করতো, বইয়ের কিছু রয়্যালটি পেয়েছিলাম, এটা দিয়ে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করছিলাম। এই কারণে অনেক ভেবে কানাডায় আসার চিন্তাভাবনা করলাম।
বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্ট আটকে তাকে পদে পদে মানহানি করেছেন বলেও এসময় অভিযোগ করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।
এদিকে কানাডা কর্তৃপক্ষ তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, ‘এখানে আসার পরে আমূল পরিবর্তন যেটা পেলাম, তারা (কানাডা সরকার) স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছে, তারা বলছে স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা আপনার পাশে আছি। থাকার ব্যবস্থা সবকিছু তারা অ্যারেঞ্জ করে দিচ্ছে।
দেশে ফেরার ব্যাপারে পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনুন, যখন প্রধান বিচারপতি ছিলাম, সে সময় যদি আমাকে গৃহবন্দি রাখা হয়, দেড় পছর পর আমাকে একটা মামলা দিয়ে দিলো, তাদের (সরকার) ইনটেনশন যদি ভালো থাকতো তাহলে তো এটা করতো না।
তবে ভবিষ্যতে দেশে ফিরে দাতব্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে বলে জানান এসকে সিনহা।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
তিনি বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে সরকারের তরফ থেকে তখন বলা হয়েছিল, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তা দুদক দেখবে।
দেড় বছরের বেশি সময় তদন্তের পর গত ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক; ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি করে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা সাবেক বিচারপতি সিনহা গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসে একটি বই প্রকাশ করেন। সে সময় তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, এ কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।