গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক এলাকার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র শুভ আহমেদ হত্যাকারী তারই চার সহপাঠী। তারা হচ্ছে টঙ্গীর পাগাড় এলাকার কামাল পাঠানের বাড়ির ভাড়াটিয়া মহিউদ্দিনের ছেলে মৃদুল হাসান পাপ্পু ওরফে পাপ্পু খাঁন, ফকির মার্কেট এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে সাব্বির আহমেদ, একই এলাকার নূরুল ইসলাম খোকনের ছেলে রাব্বু হোসেন রিয়াদ এবং আলতাফ উদ্দিনের ছেলে নূর মোহাম্মদ রনি।
তারা স্থানীয় ফিউচার ম্যাপ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি ধারালো সুইস গিয়ার ছোরা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৪ কিশোর শুভকে হত্যার বর্ণনা ও কারণ জানিয়েছে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম চার কিশোরের বরাতে গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। চার কিশোরের বর্ণনানুযায়ী, হত্যাকান্ডের আগের দিন তারা শিক্ষা সফরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় গ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘরে যায়।
ফেরার পথে পাপ্পু ও তার বান্ধবী একই সিটে বসলে শুভ মুঠোফোনে তাদের ছবি তোলে এবং অন্য সবাইকে দেখিয়ে ঠাট্টা করতে থাকে। আকস্মিক ছবি তোলাতে পাপ্পু ক্ষুব্ধ হয় শুভর ওপর। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে পাপ্পু, সাব্বির, রাব্বু ও রনি তাদের গ্রুপের অপর সদস্যদের নিয়ে শুভর ওপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
তারা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৭ জুলাই রাত ১০টার পর কৌশলে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে যায় শুভকে। প্রথমে সবাই মিলে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে সাাব্বির ও রাব্বু ছোরা দিয়ে শুভর বুকে ও পিঠে আঘাত করে। পরে রনি একই ছোরা দিয়ে শুভর মাথায় আঘাত করে। শুভ দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাইলে পাপ্পু তাকে ধাওয়া করে পিঠে আঘাত করে। এতে সে মাটিতে পড়ে যায়।
লে. কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম জানান, টঙ্গীর বিসিক ফকির মার্কেটের পাগাড় মদিনাপাড়া এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহমেদকে বুকে, পিঠে ও মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা রাজু আহম্মেদ টঙ্গী পূর্ব থানায় মৃদুল হাসান পাপ্পু এবং অজ্ঞাতনামা ৬ জনকে আসামি করে হত্যামামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় র্যাব আসামিদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাপ্পু খাঁন, সাব্বির আহমেদ, রাব্বু হোসেন রিয়াদ ও নূর মোহাম্মদ রনিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো সুইস গিয়ার ছোরা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে প্রধান আসামি মৃদুল হাসান পাপ্পু জানায়, সেসহ অপর আসামিরা স্থানীয় ফিউচার ম্যাপ স্কুলের নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তারা সবাই এলাকার নবগঠিত একটি গ্যাংয়ের সদস্য। ছয় মাস আগে শুভ একই স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।