শরীয়তপুরে ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নারী নির্যাতন বিরোধী ও ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
বুধবার (১০জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জাতীয় মহিলা সংস্থা ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কামিশন, আইনজীবী, বেসরকারি সংস্থা এসডিএস, নুসা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ জোটসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও বেসরকারী সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
দেশব্যাপী ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন হলেও সম্প্রতি শরীয়তপুরের এক চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলায় একজন নারী আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে একজন নারী বিচারক কলেজছাত্রী ধর্ষণের আসামি মেয়র পুত্রকে ঘটনার মাত্র সাতদিনের মাথায় জামিন দেয়ার বিষয়টি প্রতিপাদ্য হয়ে দাঁড়ায়।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মানবাধিকার নেত্রী এ্যাডভোকেট রওশন আরা, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মির্জা হজরত আলী, জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, এসডিএস পরিচালক বি,এম কামরুল হাসান, নুসা পরিচালক জয়দেব কুন্ড, শরীয়তপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিনা ইয়াসমিন, জেলা পরিষদ সদস্য ও এডভোকেট রাশিদা মির্জা, নিরাপদ সড়ক চাই কমিটির সভাপতি এ্যাড. মুরাদ মুন্সি প্রমূখ।
এ সময় তারা বলেন, ধর্ষককে প্রথমে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল কার্যক্রম থেকে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করতে হবে। ধর্ষক গ্রেফতারের ৩ মাসের মধ্যে কোন আইনজীবী ধর্ষকের পক্ষে জামিন চাইতে পারবে না।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কার্য সমাপ্ত করে ৭দিনের মধ্যে প্রকাশ্যে বিচার কার্যকর করতে হবে। তাহলে ধর্ষণ করার পূর্বে একবার হলেও ভাববে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম কাজ সে করবে কিনা।
এ সময় পিপি এডভোকেট মির্জা হজরত আলী মানববন্ধনকারীদের দাবি কার্যকর করতে জেলা আইনজীবী সমিতির নের্তৃবৃন্দ ও জেলা জজশীপের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন বিকেলে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ বেপারীর বিবাহিত পূত্র মাসুদ বেপারী তার দু:সম্পর্কের আত্মীয়া হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকের এক কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
নিজের বুদ্ধি আর সাহসিকতার জোরে মেয়েটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।বিষয়টি রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে মাসুদ বেপারীকে ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে আটক করে।
৩০ জুন দুপুরে ওই মেয়েটি ও তার বাবা জাজিরা থানায় হাজির হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে।১ জুলাই ধর্ষক মাসুদকে আদালতের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
৭ জুলাই ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মাসুদের জামিন প্রার্থনা করে তার আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ মাসুদের জামিনের বিরোধীতা করে ৭ দিনের রিমান্ড দাবি করেন। কিন্তু আদালত মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং রিমান্ড আবেদটিও না মঞ্জুর করেন।
৮ জুলাই মাসুদের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পূনরায় মাসুদের জামিন আবেদন করলে একজন নারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ) মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী ধর্ষক মাসুদকে জামিনে মুক্তির আদেশ প্রদান করেন।
ধর্ষক মাসুদ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবার এখন আতংকের মধ্যে রয়েছে।বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকদের মাধ্যমে ওই পরিবারকে চাপ দেয়া হচ্ছে মামলা তুলে নিতে।মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন ধর্ষিতার পরিবার।