দুর্নীতির মামলায় পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের ভাগনে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন।
এদিন মাহমুদুল হাসান আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে এ জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে দুদকের একই মামলায় ২ জুলাই ডিআইজি মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠান ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। দুদকের মামলায় আগাম জামিন নিতে গত সোমবার হাইকোর্টে হাজির হন ডিআইজি মিজান। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
এদিকে গত পহেলা জুলাই ডিআইজি মিজানের সঙ্গে ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানও হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। হাইকোর্ট তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্ল্যাহ হিরু আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
আসামির পক্ষে জামিন আবেদনে বলা হয়, আসামি মাহমুদুল হাসান দুই বছর ধরে পুলিশের এসআই পদে চাকুরি করছেন। তার আগে তিনি ব্যবসা করতেন। চাকুরি করে তিনি কোনো সম্পদ অর্জন করেন নাই, যা করেছেন চাকরির আগে ব্যবসা করে। তার ইনকাম ট্যাক্স ফাইল আছে। আর মামলার সম্পদগুলোর আসামি মিজানের। তিনিই নামে-বেনামে ক্রয় করেছেন। এ সম্পর্কে এ আসামি কিছুই জানেন না।
এ সময় বিচারক প্রশ্ন করে বলেন, ‘মামলায় অভিযোগে আসামির নামে ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। যার নমিনি আসামি ডিআইজি মিজান কেন?’
জবাবে আইনজীবীরা বলেন, ‘এ মামলার কোনো সম্পত্তি সম্পর্কে এ আসামি কিছু না জানেন না। তিনি ব্যাংকের কোনো কাগজে স্বাক্ষরও করেননি।’
এরপর দুদকের প্রসিকিউটর কাজল বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে মামলায় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ডিআইজি মিজানকে অর্থ ও সম্পত্তি হস্তান্তর-রুপান্তরে সহায়তা করেছেন। এছাড়া এ আসামি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে হাইকোর্ট তার জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে আত্মসর্মণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এ পর্যায়ে এ আসামিকে জামিন দেয়া সমিচীন হবে না।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৪ জুন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ মামলাটি করেন। ডিআইডি মিজান ও ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান ছাড়াও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকেও আসামি করা হয়।
মামলার পর আত্মগোপনে থাকা ডিআইজি মিজান গত পহেলা জুলাই হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয় এবং তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
মামলার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ জুন ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।