গাজীপুরের শ্রীপুরের অটো স্পিনিং মিলের সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা সেলিম কবির (৪২)। মঙ্গলবার দুপুরের খাবার শেষ করে অফিসে বসেছিলেন। এমন সময় অগ্নিকাণ্ডের খবর কানে আসে। দৌড়ে ছুটে যান তার দায়িত্বে থাকা রিং সেকশনে।
শ্রমিকদের নিরাপদে রুম থেকে বের হওয়ার তাগিদ দেন। একটি সময় যখন আর কেউ বের হচ্ছে না, তখন নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে নিজেই ঢুকে পড়েন আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যে। উদ্দেশ্য-ভেতরে আর কোনো শ্রমিক আটকা পড়েছে কিনা তা দেখা। কিন্তু এটাই কাল হলো তার, আগুনের হাতেই নিজের জীবন সঁপে দিয়ে শেষ বিদায় নেন তিনি।
সেলিম কবির গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ভান্নারা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। গত আড়াই বছর ধরে এ কারখানায় চাকরি করতেন। স্ত্রী সখিনা বেগম, নয় বছরের ছেলে সাবিদ হোসেন ও নয় মাস বয়সী ছেলে সাজিদ হোসেনকে নিয়ে কারখানার অফিস কোয়ার্টারে থাকতেন। স্বামী হারানোর শোকে মুহ্যমান সখিনা বেগম। মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার।
সন্তানও বাবাকে দেখার আবদার করছে বারবার। ছোট ছেলে সাজিদ কিছু বুঝতে না পারলেও বড় ছেলে সাবিদ যেন কিছুতেই মানতে পারছে না বিষয়টি। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। মায়ের চেয়ে যেন বাবাই ছিল তার কাছে বিশেষ কিছু। বিদ্যালয়ে আনা নেওয়া, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য বাবার দিকেই চেয়ে থাকত সে। বাবাকে ছাড়া যেন তার চলেই না। গতকাল যখন বাবা হারানোর সংবাদ পায়, তখনই যেন তার মনে চলে এসেছে অন্যরকস আবহ।
এখন শুধু বাবার কঙ্কালসার দেহকে দেখার আবদার, তবে আগুনে সেলিম কবিরের দেহ এতটাই অঙ্গার হয়েছে যে, সন্তানও শেষ বিদায়ের সময় বাবার প্রিয় মুখটা চিনতে পারেনি ঠিকমতো। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (এডমিন) হারুনুর রশিদ জানান, সেলিম কবির কারখানার শ্রমিকদের কাছে খুবই আপন ছিল। নিজের জীবনকে নিরাপদে রাখার সুযোগ ছিল তার সামনে।
কিন্তু তিনি নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে প্রিয় শ্রমিকদের নিরাপদ করতে গিয়ে প্রাণ হারান। গত মঙ্গলবার দুপুরে এ কারখানার গুদামে আগুন লাগে। পরে দ্রুত পুরো কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।