অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিভিশন সেল ‘চম্পাকলী’তে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েস দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কারা বিধি অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাবেন। সেজন্য তাকে ডিভিশন সেল ‘চম্পাকলী’তে রাখা হয়েছে। ডিভিশন পাওয়া বন্দিরা যেসব সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাকে সেসব সুবিধা দেয়া হবে।’
ডিভিশন পেলে তিনি যেসব সুবিধা পাবেন- আসবাবপত্র হিসেবে একটা টেবিল, একটা খাট, চাদর ও একটা চেয়ার। এছাড়া পত্রিকা, বই, একটি সাধারণ টেলিভিশন ও রেডিও।
ব্যবহার্য উপকরণ হিসেবে হাজতি সাবান, টুথপেস্ট, আয়না, বালিশ, কম্বল, তোষক, চিরুনি, তেল, পায়ের স্যান্ডেল, তোয়ালে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েস ডিআইজি মিজানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগের দিন হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য তিনি গেলে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এ সময় তাৎক্ষণিক মিজানকে হাইকোর্ট পুলিশের হাতে তুলে দেন আদালত। গ্রেপ্তারের পর তাকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। গতকাল সকাল ১১টার কিছু আগে তাকে আদালতে হাজির করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য, মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। পরে ২৫ জুন মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
অন্যদিকে মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। যদিও নারী নির্যাতন, ঘুষ প্রদান, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে দুই বছর ধরে মিজানুরের নাম আলোচনায় এলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।