Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ শনিবার, জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

কারাগারের ভেতর বসেই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩ আসামি!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০১৯, ০৬:০০ PM
আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯, ০৬:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বন্দি অবস্থায় থেকেও পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অংশ নিয়েছে তিন আসামি। ঘটনাটি অবাক করা হলেও টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অংশ নেয়ায় করা মামলার এজহারে নাম উঠেছে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা  তিন আসামির।

মামলার এজহারভুক্ত তিন আসামি হলেন- টেকনাফ উপজেলার নাজিরপাড়া এলাকার হোছন আহমদের ছেলে মো. ইদ্রিস (৩৭), মৃত ইউসুফের ছেলে আলী আহমদ প্রকাশ লেডু (৫৫) ও আবুল কাসেমের ছেলে মো. রফিক (৩৭)। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক মামলায় বন্দি অবস্থায় আছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কক্সবাজার জেলা কারাগারে।

অবশ্য পুলিশ বলেছেন, মূলত কোন ঘটনায় আসামিদের প্রাথমিক জবানবন্দিতে এজাহারে আসামিভুক্ত করা হয়। কে কারাগারে, কে বাইরে রয়েছে সেটি তখন জানা থাকে না।

চলতি বছরের ১১ মে রাতে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী দুদু মিয়া নিহত হয়। এ সময় আহত হয়েছিল পুলিশের তিনজন সদস্যও। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি দেশীয় তৈরি এলজি ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, ১৫ রাউন্ড কার্তুজের খোসাহ ৪ হাজার পিস উদ্ধার করেছে। ঘটনায় পরে নিয়ম অনুযায়ী টেকনাফ থানায় পুলিশের পক্ষে সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সনজীব দত্ত বাদী হয়ে ২৯ জনকে পলাতক আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। (মামলা নাম্বার- (৪৩/৩৬৫), (৪৪/৩৬৬) এবং (৪৫/৩৬৭)। উক্ত মামলাগুলোর প্রত্যেকটিতে ১৬ নাম্বার আসামি মো. ইদ্রিস, ২১ নাম্বার আসামি আলী আহমদ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রয়েছেন এবং ২৮ নাম্বার অভিযুক্ত পলাতক আসামি মো. রফিক কক্সবাজার কারাগারে আছেন। এর মধ্যে রফিক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন। তিনি স্বঘোষিত একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ বলেন, কারাগার থেকে কোনো আসামি জামিন না হওয়া পর্যন্ত বাহিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। টেকনাফে নাজিরপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মো. রফিক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে আমার কারাগারে হাজতি হিসেবে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে।

এছাড়াও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ইদ্রিসের ভাই মো. আইয়ুব বলেন, ইদ্রিস গত বছর পুলিশের হাতে আটক হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তাকেও আসামি করা হয়েছে। আমিও টেকনাফে বসবাস করি না অনেক আগে থেকেই। আমাকেও আসামি করা হয়েছে। ফলে হাজতে থাকা অবস্থায় মামলায় আসামি করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করেন মাদকবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন দায়িত্বহীন কাজ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ মে রাত অনুমান পৌনে দশটার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার জনৈক জিয়াউর রহমানের বাড়ির সামনে বালু মাঠ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী দুদু মিয়াকে আটক করা হয়। এ সময় দুদু মিয়ার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে দুদু মিয়া তার ব্যবসায়ীক সহযোগি হিসেবে ২৯ জনের নাম স্বীকার করে পুলিশের কাছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, ১১ মে রাত অনুমান আড়াইটার দিকে সাবরাং ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ রোড় সংলগ্ন মুন্ডার ডেইল নৌকা ঘাটে তাদের গোপন আস্তানায় অভিযান চালায়।

সেখানে পৌঁছা মাত্র দুদু মিয়া চিৎকার করে বলে ‘সোনা আলী, বশর, জাফর, ইসমাইল তোরা কই আমাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাও। তার চিৎকার শুনে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে সহযোগিরা। তাদের ছোড়া গুলিতে এএসআই নিজাম উদ্দিন ও কনস্টেবল মো. ইব্রাহীম আহত হয়। এ অবস্থায় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালাই। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে দুদু মিয়ার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুদু মিয়াকে উদ্ধার করে দ্রুত টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি দেশিয় তৈরি এলজি ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, ১৫ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার বাদী এএসআই সনজীব জানান, আমরা চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী দুদু মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার দেওয়া বক্তব্যের উপর মামলায় অন্যন্যদের আসামি করা হয়। এখানে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। এ মামলায় যদি কোন হাজতি আসামি হয়ে থাকে তবে, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তদন্ত করে তাদের বাদ দিতে পারেন।

এছাড়াও একই কথা বলছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। তিনি বলেছেন, মুলত কোন ঘটনায় আসামিদের প্রাথমিক জবানবন্দিতে এজাহারে আসামিভুক্ত করা হয়। কে কারাগারে, কে বাইরে রয়েছে সেটি তখন জানা থাকে না। যদি তদন্তে এমনটি পাওয়া যায়, তাহলে তাদের মামলার চার্জশীট থেকে বাদ দেয়া হবে।

Bootstrap Image Preview