Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ শুক্রবার, জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

রিফাতের খুনিদের ঠেকানোর চেষ্টা করা সেই যুবক ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৯, ০৯:১৪ PM
আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯, ০৯:১৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নেয়াজ রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে, যা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। সে সময় রিফাতের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার।

ভাইরাল হওয়া ওই হামলার ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটকের কাছে কয়েকজন যুবক রিফাতের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে উপর্যুপরি হামলা চালাচ্ছে। এসময় আয়েশা আক্তার একাই দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

একবার এ খুনির কাছে তো, আরেকবার ও খুনির কাছে। কখনো পেছন থেকে জাপটে ধরছেন, আবার কখনো একেবারে খুনির হাতে থাকা রাম-দায়ের সামনে গিয়ে পথ আগলে ধরছেন। কিন্তু খুনিদের থামাতে পারেননি আয়েশা।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শতাধিক লোকের মাঝে প্রকাশ্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে রিফাতকে। আশেপাশের সবাই যার যার মতো করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, শুধু একমাত্র সাহসী ব্যক্তি, যে রিফাতকে বাঁচাতে প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এগিয়ে এসেছিলেন। সেই ফুটেজ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তারা নাম। তিনি হলেন বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রনি।

নুরুল ইসলাম রনি বলেন, আমি বাসা থেকে শহরে যাওয়ার পথে দেখি, কলেজের গেট থেকে রিফাতকে টেনেহিঁচড়ে বের করে কোপানো হচ্ছে। তখন আমি হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।

রনিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হোক বিপদে পড়া ব্যক্তিটি অন্য মতাদর্শ রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য, এটাই মানবিকতা।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র বলছে, হত্যাকারী দুজনের একজন রিফাত ফরাজী, আরেকজন নয়ন বন্ড। দুজনই অনেক আগে থেকেই অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। তাদের কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।

এদিকে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা সদর থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে খুনের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নয়নকে যিনি এলাকায় ‘নয়ন বন্ড’ নামেও পরিচিত। দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি, তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজি, চার নম্বর আসামি চন্দন। এর মধ্যে চন্দনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

Bootstrap Image Preview