Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ শুক্রবার, জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘সরি বললাম তো জান’ খুনি নয়নকে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৯, ০৬:০৪ PM
আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯, ০৬:০৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


প্রকাশ্যে স্বামীকে খুন হতে দেখলেন স্ত্রী। শতচেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলেন না খুনির ধারালো অস্ত্রের কোপ থেকে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে হতবাক দেশবাসী।

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের এই ঘটনা ইতিমধ্যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়েছে। নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে- দেশটা কি মগের মুল্লুক? দিন-দুপুরে এভাবে খুন সিনেমার নৃশংসতাকেও হার মানায়।

শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার স্বামী শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফের (২৫) শরীরে আটটি কোপের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে ঘাড়ের রগ ও শরীরে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। মামলা হয়েছে ১২ জনের নামে। নিহতের বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পুলিশের সঙ্গে অভিযানে সহোযোগীতা করছে র‌্যাব সদস্যরাও। এমন যখন অবস্থা তার মধ্যেই সামনে আসল এক ফেসবুক পোস্টের কমেন্টের স্ত্রীনশট। যা সম্প্রতি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যা থেকে আসলে অনেক কিছুই প্রকাশ পায়!

এদিকে ওই স্ত্রীনশটে দেখা যায়, কমেন্টে নয়ন বন্ডকে ‘সরি জান’ বলে সম্বোধন করে মিন্নি শরীফ। এরপর প্রতিউত্তরে নয়ন বন্ড মিন্নিকে বলেন, ‘নো সরি… এগুলো আমার প্রাপ্য…।’

এরপর আবারো মিন্নি বলেন, ‘(নয়ন বন্ড) সরি বললাম তো…।’ তাদের এ উভয়ের এ ধরণের যোগাযোগ থেকে তাদের সম্পর্ক অনেকটাই স্পষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এর আগে গত ৭ জুন নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন মিন্নি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘তোরে ভুলে যাওয়ার লাগি আমি ভালোবাসিনি সব ভেঙ্গে যাবে এভাবে ভাবতে পারিনি তুই ছাড়া কে বন্ধু হায় বুঝে আমার মোন তুই বিহনে আর এ ভুবনে আছে কে আপন?’

পুলিশসূত্রে জানা গেছে, হত্যাকারী দুজনের মধ্যে একজনের নাম একজন এই নয়ন বন্ড (২৫)। অন্যজনের নাম রিফাত ফরাজী।

তারা দুজনই অপরাধজগতের বেশ পরিচিত মুখ বলে জানিয়েছে বরগুনা পুলিশ।

স্থানীয়রা এ দুই সন্ত্রাসীর তাণ্ডবে বেশ অতিষ্ঠ বলে জানিয়েছেন। তাদের ভয়ে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছিলেন না। প্রায়ই নানা অজুহাতে লাঞ্ছিত হতেন স্থানীয়রা। প্রতিবেশীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করত এ দুজনের নাম শুনলে।

এলাকাবাসীর ওপর এসব অত্যাচার করে বিভিন্ন সময় তাদের জেল খাটতে হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কিন্তু খুব অল্প সময়েই হাজত থেকে বের হয়ে আসতেন অদৃশ্য কারণে। আর ফিরেই তাদের তাণ্ডবলীলার পরিমাণ আরও বেড়ে যেত। এ ঘটনার অন্যতম আসামি রিফাত ফরাজীর বিষয়ে পুলিশসূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যুক্ত ছিলেন খুনি রিফাত ফরাজী। নানা ছুঁতোয় স্থানীয়দের ওপর হামলা, মারধর করা ছিল রিফাতের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

এসব ঘটনায় কয়েকবার গ্রেফতার করা হয় রিফাতকে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই তরিকুল ইসলাম (২১) নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করেন রিফাত ফরাজী।

ভুক্তভোগী তরিকুল বলেন, সামান্য এক বিষয়ে রিফাত ফরাজীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ি। ওই সময় রিফাত ফরাজী তাকে কুপিয়ে যখম করার হুমকি দেন। সেই ভয়ে আমি দেড় মাস রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে যাইনি। কর্মস্থল থেকে প্রতিদিন আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে বাসায় যাওয়া-আসা করতাম।

তিনি যোগ করেন, হুমকি দেয়ার দেড় মাস পার হয়ে গেলে এ নিয়ে আর কোনো ভয় নেই ভেবে আধা কিলোমিটার না ঘুরে একদিন সন্ধ্যায় রিফাতের বাসার সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম। আর সে সন্ধ্যায়ই দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আমায় মাথায় গুরুতর যখম করে রিফাত।

একই বছর মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক হয় রিফাতের বাবা।

স্থানীয় পুলিশ জানায়, রিফাত বরগুনার হোমিও চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ডিকেপি রোডের বাসার ছাত্র মেসে যান এবং অস্ত্রের মুখে সব ছাত্রকে জিম্মি করে তাদের ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে।

এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ রিফাতের বাবাকে আটক করে মোবাইলগুলো উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ছেলে ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘রিফাতের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১৪টি মোবাইলের মধ্যে ১১টি উদ্ধার করা হয়। আর বাকি তিনটি নতুন মোবাইল কিনে দিলে থানা থেকে রিফাতের বাবাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’

এ ছাড়া রিফাতের জন্য দামি, আকর্ষণীয় মোবাইল ব্যবহার করতে ভয় পেতেন এলাকাবাসীর অনেকেই। কারও হাতে দামি স্মার্টফোন দেখলেই সেটি ছিনতাই করতে উদ্যত হতো রিফাত।

বিদেশ থেকে প্রাইম মডেলের একটি স্যামসাং মোবাইল মেহেদী নামের এক যুবকের থেকে ছিনিয়ে নেয় রিফাত। পরে সেই সেট ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে হত্যার হুমকি দিত রিফাত। প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছাড়েন মেহেদী।

এমনটাই জানালেন মেহেদীর বোন বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মারজানা মনি।

Bootstrap Image Preview