নিষিদ্ধঘোষিত আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) ও তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবকদের টার্গেট করেছে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে কক্সবাজার জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতার কোনো তথ্য নেই।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা বেড়েছে। জেএমবি ও এবিটির বেশ কয়েক নেতা চট্টগ্রাম এবং ভারত-বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে শিক্ষিত ও ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন যুবকদের টার্গেট করছে জেএমবি ও এবিটির কয়েক নেতা। বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুফতি ও আলেমদের নিজেদের সংগঠনে যুক্ত করে সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিবদমান দুটি সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের রিক্রুটিং কর্মকাণ্ড সহজেই পরিচালনা করতে পারছে।
জঙ্গি কর্মকাণ্ড নজরদারি করা একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও পাকিস্তানভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের কয়েক নেতা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। যৌথভাবে চট্টগ্রাম ও ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী তিনটি এলাকাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে বেশ কয়েক জঙ্গি সদস্যের প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপতৎপরতা চলছে।’
সিটিটিসির উপকমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিদ্যমান অবস্থাকে জঙ্গিরা পুঁজি করতে চাইছে। তবে পুলিশের নজরদারি অব্যাহত আছে।’
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘কক্সবাজারে ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মোটা অঙ্কের বিদেশি সাহায্য আসে। এই টাকার ভাগ নিয়ে উগ্রপন্থি সংগঠনের নেতারা সাধারণ রোহিঙ্গাদের নানাভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করে থাকেন।’ এ ছাড়া পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন টিটিপির কয়েক নেতা রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতার কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনের কর্মতৎপরতা নিয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগে খুনোখুনির ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে তা কমে এসেছে। বিশেষ করে ক্যাম্পের বাইরে অবৈধ বাজার বসানো ও সেখান থেকে চাঁদা তোলা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর সব মাঝিকে (রোহিঙ্গা নেতা) নিয়ে বৈঠক করে তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, আশ্রয়স্থলে কোনো ধরনের বেআইনি কাজ করতে পারবেন না। তারপরও কেউ যদি করার চেষ্টা করেন, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ টেকনাফের চারটি ও উখিয়ার ২৪টি ক্যাম্পকে আট ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে আট সদস্যের পুলিশ টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এর সত্যতা খুঁজে পাইনি আমরা। ক্যাম্প থেকে যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তারা মূলত ইচ্ছে করেই নিখোঁজ হয়েছেন। কারণ ক্যাম্পে তাদের কেউ থাকতে চায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রায় ৯০০ সদস্যের পাশাপাশি সরকারি সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন সেখানে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের ভেতর জঙ্গিরা সংগঠিত হবেÑ এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’