Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্বাস্থ্যসেবা খাতে শুধু সরকার নয়, সকলের এগিয়ে আসা দরকার: গণপূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০১৯, ০৪:১৫ PM
আপডেট: ১৭ মে ২০১৯, ০৪:১৫ PM

bdmorning Image Preview


গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে শুধু সরকার নয়, সকলের এগিয়ে আসা দরকার। ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক এর সৎ প্রচেষ্টার অনন্য-অসাধারণ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ সুদূরপ্রসারীভাবে উপকৃত হচ্ছে। সে জন্য সমাজে যারা বিত্তবান আছেন তারাও এগিয়ে আসুন। আর্থিক সম্পত্তি না থাকলেও যাদের হৃদয়ের সম্পদ অনেক বড় তাদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।    

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুরস্থ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষ্যে হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত গণমুখী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
 
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। এই মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটি সংবিধানেও বলা হয়েছে। এটা নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনা সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তাঁর লক্ষ্য বাংলাদেশের একজন মানুষও যেনো স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।

চিকিৎসাখাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ভূমিকা শেখ হাসিনা সরকার রেখেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, প্রতিটি বিভাগে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি জেলায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর লক্ষ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে দক্ষ মানুষ তৈরি করা এবং নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। কোন সরকারই এতটা সংবেদনশীলতা ও আন্তরিকতার সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি নজর দেয়নি।

অযোগ্য মানুষকে বিশেষায়িত জায়গায় বসোনো যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একজন যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ ডাক্তার না হয়ে অযোগ্য মানুষ ডাক্তার হলে যে সর্বনাশ নয়, তা থেকে পেছনে ফিরে আসা যায় না।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, চিকিৎসাশাস্ত্রে অনেক মহামানব অনেক বড় বড় অবদান রেখে গেছেন। এর পরও কেউ কেউ এ শাস্ত্রকে কলঙ্কিত করছেন। তবে এর সংখ্যা অত্যন্ত কম। কিন্তু এরাই এই মহান পেশার সমৃদ্ধ, সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গাকে বিতর্কিত করে তোলে। আমরা একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ছুটে চলেছি। সমাজের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, নৈরাজ্য এবং অনাকাঙ্ক্ষিত অনৈতিকতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। অসুস্থ, অনৈতিকতা এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, নৈতিকতার মানদন্ডকে ফিরিয়ে আনার জন্য, অবক্ষয়ের বল্গাহীন স্রোতকে বাধা দেয়ার জন্য আছেন, ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে যারা চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে যারা সম্পৃক্ত আছেন সকলে বড় একটা ভূমিকা পালন করতে পারেন।

মানুষকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা যায় উল্লেখ করে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, নীতি-নৈতিকতার কথা মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে চাপ বেড়ে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপে মানুষ আক্তান্ত হয়। স্বস্তির সঙ্গে থাকার জন্য কিছু ফর্মুলা দরকার। সেই ফর্মুলাটা ডাক্তাররা দিতে পারেন। সব সময় অপারেশন বা ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা নাও হতে পারে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে আপনাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অংশে পরিণত করে বৃহৎ পরিসরে এর অনুশীলন করা দরকার। অনেক গুণগত ভূমিকা জাতির জন্য আপনারা রাখছেন এবং রাখতে পারেন।
 
মন্ত্রী বলেন, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও পারিবারিক শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের দৃষ্টি দিতে হবে। এ রাষ্ট্র অনেক ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্ট একটি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক, গুণগত, মানবিকতাসম্পন্ন ভালো মানুষ করার জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি মনোজাগতিক চিকিৎসা দরকার।

বক্তব্যের সমাপনীতে মন্ত্রী যোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকার গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাত থেকেও আপনারা সকলে এগিয়ে আসুন। চিকিৎসকদের পেশা যাতে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য চিকিৎসার পাশাপাশি মনোজাগতিক চিকিৎসাকে আরো বেশী সম্প্রসারিত করতে হবে।

দেশের মালিক জনগণ উল্লেখ করে মন্ত্রী জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণমুখী সেমিনার আয়োজনের জন্য আয়োজকদের অভিনন্দন জানান।

উল্লেখ্য, রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য জনগণ এবং চিকিৎসকসহ সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৭মে বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লীগ এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব হাইপারটেনশন এর যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ শুক্রবার বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করেছে। বিশ্ব রক্তচাপ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘আপনার রক্তচাপ জানুন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রধান করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বার্দান জং রানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও জনাব আল-হোসাইনী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী।

Bootstrap Image Preview