বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে চলতি মৌসুমে যমুনার চরাঞ্চলসহ বাঙালী নদীর চরগুলোতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। সে সাথে ভুট্টার দাম ভাল পাওয়ায় ভুট্টা চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। এখন উৎপাদিত ভুট্টা ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় ভুট্টা চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চরে বছরের পর বছর অনেক জমি পতিত পড়ে থাকে। এসব পতিত জমিতে বিভিন্ন অসুবিধা থাকায় ভাল কোন ফসলের চাষ করা যায় না। কিন্তু ওইসব পতিত জমিতে ভুট্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েন চাষীরা।
তারপরেও তাদের দাবি পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলায় যে তুলনায় ভুট্টার চাষ করা হয় সে তুলনায় এখানে কিছুই না। আমাদের কে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ভুট্টা চাষের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে ধুনটের ন্যায় সারিয়াকান্দিতেও ভুট্টা চাষের প্রসারতা ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দিতে ২ হাজার ৫'শ ১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধাণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করার পর এপ্রিল মাসের শেষের দিক হতে ভুট্টা ঘরে তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া ছিল। চরাঞ্চলে পরে থাকা জমিতে বীজ বপনের পর থেকেই গাছ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। ধরা পড়ে ভুট্টা গাছের ঘাটে ঘাটে ভুট্টা আর ভুট্টা।
প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ১৫/২০টি করে ভুট্টার কলা ধরা পড়ে। ভুট্টা চাষিরা গড়ে ৬'শ টাকা মণ দরে বিক্রি করে । চরের কোন কোন কৃষক এককভাবে ১৫/২০বিঘা পর্যন্ত জমিতে ভুট্টা চাষ করেন।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আরো জানান, এছাড়াও এবার গড়ে ৯ মেট্রিক টন ভুট্টা ফলন হয়েছে। বিপণন করতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি হাজার হাজার নারী শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। নারীরা দক্ষ হয়ে উঠায় একাজে তাদের কদর বাড়ছে।
উপজেলার শিমুলতাইড় চরের কৃষক মকবুল হোসেন জানান, তিনি এবার প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। ওই জমি হতে প্রায় ২ লক্ষ টাকার ভুট্টা বিক্রি করেছি।
চরদলিকা চরের মাহফুজার রহমান ডাবলু জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে এবছর ভুট্টা করেছিলেন। প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষ ও কাটা মাড়াইয় করতে মোট খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমি থেকে ভুট্টা পাওয়া যাচ্ছে ৩৫/৪০ মণ পর্যন্ত। বাজারগুলোতে প্রতি মণ ভুট্টা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রয় হয়ে থাকে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। সে সাথে বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় এবার আমাদের কপাল খুলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, আমাদের পরামর্শে ভুট্টা চাষীদের যাবতীয় কারিগরি সহযোগিতা এবং অনুকূল আবহাওয়ায় চরের চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।