হাসি নেই বোরো চাষিদের মুখে, নেই বাম্পার ফলন। একদিকে ফনির আঘাতে ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে, দু'দফা শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, বোরো ধানের নেই ন্যায্য মূল্য।
বিরুপ আবহাওয়া বিরাজ করায় তড়িঘড়ি করে ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করায় ব্যর্থ হচ্ছেন চাষিরা। কেননা ধানের মূল্য কমে যাওয়ায় কৃষকেরা কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা মাড়াই করতে পারছে না। যদিও পাওয়া যায় তবে খরচ গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ তিনগুন।
এ দিকে স্থানীয় ফড়িয়া চক্র মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছে মণ প্রতি ৬০০ টাকা থেকে ৬৭০ টাকা দরে। আর একজন কৃষকের ধান কাটার জন্য শ্রমিকের পিছনে খরচ হচ্ছে দৈনিক ৬৮০ টাকা। অর্থাৎ কৃষাণের মজুরি এক মণ ধানের চেয়েও বেশি।
চাষীরা জানান, ধান রোপণ, পরিচর্যা, সার-কৃষাণ ও ধান মাড়াইসহ ধান ঘরে তুলতে খরচ হচ্ছে অনেক বেশি। এতে করে অধিকাংশ কৃষক দেনায় জড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। অনেক কৃষক এখনই দেনায় জর্জরিত।
সরকার নির্ধারণ করেছে, প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকা, গম ২৮ টাকা ও ধান ২৬ টাকা। এ হিসেবে ধানের মণ ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে এ দাম পাচ্ছে না।
সরকারি চাল কে বা কারা কোথা থেকে ক্রয় করে তা সাধারণ কৃষকরা জানেন না। জানলেও ফড়িয়াদের কারণে ওই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না কৃষকরা।
এক শ্রেণীর প্রভাবশালী কুচক্রীমহল প্রতিবছর ভারত থেকে নিন্মমানের পচা গম আমদানি করে রাতের আধারে খাদ্যগুদাম ভর্তি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ, তারপর বটবৃক্ষ হয়েছেন। দেখার যেন কেউ নেই দেমা খেয়ে বাঁচি কৃষক মরুক আর বাঁচুক এতে কিছু আসে যায় না।
ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব বলেন, ধানের ফলন কম দামও পাচ্ছি না। ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। লাভের মুখ দেখা নিয়ে সংশয় প্রকাাশ করে তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে তড়িঘড়ি করে ধান কেটে ঘরে তুলতে হচ্ছে। এ সুযোগে কৃষাণরা তাদের মজুরি বেশি নিচ্ছে। একজন কৃষাণের দৈনিক মজুরি ৬/৭শ টাকা। এ টাকা খরচ করে ধান ঘরে তুললেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে লাভের পরিবর্তে লোকসানের বোঝা বইতে হবে বলে আশঙ্কা করছি।
গোদাগাড়ী উপজেলার বিজড়া মৌজার কৃষক মামুন জানান, ৮ বিঘা জমিতে ইরি-রোরো ধান চাষ করতে সব খরচ মিলে ৭২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমান ধানের বাজার ৬৪০ থেকে ৬৭০ টাকা, ফলে উৎপাদন ব্যয় উড়তে মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।