ঘের ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের সকল খাল ও রাস্তা। ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ খালে বাঁধ দিয়ে ও রাস্তা কেটে ওঠানামা করাচ্ছেন ঘেরে পানি।
এমনি খাল ও রাস্তা দখল করে ঘের ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে। ফলে উন্নয়নের কোনই ছোয়া লাগেনি এ ইউনিয়নে। এক ইঞ্চি পিচ ঢালাই রাস্তা নেই। নেই উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি ইটসোলিং রাস্তাও। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এ ইউনিয়নের ২২ হাজার মানুষ।
এ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের প্রধান আয়ের উৎস্য মাছ চাষ। বাগদা, গলদা ও সাদা মাছের ঘের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মানুষ। এ ইউনিয়নে ছোট বড় মিলিয়ে ৮শ’টি ঘের রয়েছে। খাল রয়েছে ৩১টি। কাচা রাস্তা প্রায় ২০ কিলোমিটার। আংশিক পাকা বা ইটসোলিং রাস্তা প্রায় ১১ কিলোমিটার।
ঘের ব্যবসায়ীরা রেকর্ডীয় ৩১টি খালের ৩০টিতেই বাঁধ দিয়ে ঘের হিসেবে ব্যবহার করছেন। খালের পানি প্রবাহ নির্ভর করে ঘের মালিকদের ইচ্ছার ওপর। অনেক খাল অস্তিত্বও হারিয়েছে।
পূর্ব বহরবুনিয়া হিন্দু পাড়ার নাদের আলী খাল, কলেজ বাজার এলাকার জুব্বার আলী খাল, সিরাজ মাস্টারের বাজার সংলগ্ন কাটা খাল, মিয়ার খাল ও হোগলাবুনিয়ার খালসহ উল্লেখযোগ্য সরকারি খালগুলো ঘের ব্যবসায়ীদের দখলে। অসংখ্য বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা এসব খালে ঘের করছেন।
সূর্যমুখী খালের পশ্চিমপাড় থেকে শুরু করে সিরাজ মাস্টারের বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার কাচা রাস্তার ১০-১২ স্থানে কেটে কাঠের বক্স বসানো হয়েছে। কালিবাড়ি হয়ে পূর্ব বহরবুনিয়ায় যাওয়ার ইটসোলিং রাস্তা বিভিন্ন জায়গা থেকে কেটে বক্স ও পাইপ বসিয়েছেন ঘের ব্যবসায়ীরা।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. রিপন তালুকদার নিজেও কয়েকটি ঘেরের মালিক। খাল দখল ও রাস্তা কাটায় তার ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। মিয়ার খাল ও জুব্বার আলীর খাল দুটি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের দখলে।
জুব্বার আলীর খালে ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে বাঁধ দেওয়ায় ২৫-৩০টি পরিবার এখন পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রিপন তালুকদার বলেন, জনসাধারণের অসুবিধা হয় এমন কিছু করা হয়নি। ৩১টি খালের পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অন্যথায় এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
খাল বেদখলের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন সচিবের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান শুক্রবার মোবাইল ফোনে বলেন, ওই ইউনিয়নে খাল দখল ও রাস্তার কাটার বিষয়টি যুগযুগ ধরে চলে আসছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার একটি কাঠের বাক্স অপসারণ করা হয়েছে। খালের বাঁধ অপসারণ ও রাস্তা কাটার বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।