চার দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সোমবার থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন সাভারের জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (নিটার) শিক্ষার্থীরা। তার আগে ২০ দিন ধরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা তাদের দাবি জানিয়ে আসছে। কর্তৃপক্ষের সুনজর না পেয়ে সোমবার থেকে ‘ক্যাম্পাস বাঁচাও’ নামে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয় এবং তা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মীজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইনস্টিটিউটের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে বিজ্ঞপ্তিতে ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের সকাল ৯টার মধ্যে অবিলম্বে ইনস্টিটিউট ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, নোটিশের কিছুক্ষণ পরেই আমাদের হলসুপার, সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর ইসমত জেরিন আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন শেষবারের মতো যে আমরা কি হল ছাড়বো কিনা! আমরা যখন বললাম ছাড়বোনা, তিনি তখন বললেন তাহলে নিজেদের দায়িত্বে থাকতে হবে। এই বলে তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তার পরপরই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাসের পানি আর বিদ্যুতের লাইন। আমরা মনে করি আমাদের এই আন্দোলন দমাতেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে পানি ও বিদ্যুতের লাইন’।
বিষয়টি নিয়ে হলসুপার, সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর ইসমত জেরিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থী হোস্টেল ছেড়ে যায়নি। যে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী চলে গিয়েছে তারাও আবার আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যোগ দিবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ওই শিক্ষক সপ্তম এবং অষ্টম ব্যাচের চার শিক্ষার্থীকে ওই বিষয়ে ফেল করিয়ে দেন। পরে ওই শিক্ষক চাকরি ইস্তফা দিয়ে অন্যত্র চলে যান। ফল প্রকাশিত হলে আমরা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে মূল বিষয়টি খুলে বলি এবং ওই ফলাফল বাতিল করার দাবি জানাই। তবে অধ্যক্ষ এতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং আমাদের বিদায় করে দেন। পরে, ওই দিন থেকে আমরা প্রায় ১৩০০ শিক্ষার্থী ক্লাসবর্জন করি। কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীনতা প্রকাশ করে। এরপরও আমরা আরও তিনবার দেখা করি অধ্যক্ষের সঙ্গে। তিনি আমাদের দাবি মেনে নিতে নারাজ।
এরই প্রেক্ষিতে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা হানিকর এবং স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিবাদ করায় এক বছরের জন্য চার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত করতে তাদেরকে ফেল করিয়ে দেয়া হয়। অধ্যক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে আমরা সত্য ঘটনা উপস্থাপন করেছি। কিন্তু তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। ২০ দিন ধরে আমরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দাবি জানিয়ে আসছি। সেগুলোর তুয়াক্কা না করে উলটো সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে হুমকিমূলক নোটিশ জারি করে দিয়েছে।
এর আগে দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলছে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত নেই। এমনকি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মিজানুর রহমানও প্রতিষ্ঠানে নেই।
‘আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে জানানো হয়েছে অনির্দিষ্ট বন্ধের কথা। যেহেতু শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে সেক্ষেত্রে নিবাসগুলোও বন্ধ থাকবে। তাদেরকে সময় দেয়া হয়েছে নিবাস ত্যাগের জন্য। কোনো হুমকি দেয়া হয়নি। এমতাবস্তায় প্রশাসনিক ভবনে তালা থাকাটা স্বাভাবিক। প্রতিটি শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হোক সেটা আমরা কেউই চায়না। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমাদের সবার কাম্য’ বলেন নিটারের অধক্ষ মিজানুর রহমান।