ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেছেন, কক্সবাজার জেলার রামু জনপদে হাজার বছরধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমানগণ যেভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সহকারে এক সাথে বসবাস করছে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং বিশ্বের জন্য আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বাস্তবছবি হচ্ছে আজকের কক্সবাজার জেলার রামু জনপদ।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আজ বেলা ১১ টায় রামু উপজেলার ঐতিহাসিক রাংকূট বৌধ বিহার, রাংকূট জগতজ্যোতি শিশু সদন এবং শ্রী শ্রী রামকুট তীর্থধাম পরিদর্শণ উত্তর রাংকুট জগতজ্যোতি শিশু সদন প্রাঙ্গণে এক সর্বধর্মীয় মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রামু জনপদে একদিকে যেমন ২৬৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে সম্রাট অশোক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম মহাতীর্থ মহাবিহার রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে হিন্দু ধর্মের শ্রী শ্রী রামকূট তীর্থধাম/শ্রী শ্রী রাম চন্দ্রের কূটির যা খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ অব্দে প্রতিষ্ঠিত। এর পাশাপাশি রয়েছে শত শত বছরের মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন নিদর্শন। এ জনপদের সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনগণের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতমূলুক মনোভাব সত্যিই অনুপ্রেরণা দায়ক, যা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ সময় তিনি রামুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং সংস্কারে সরকার বিশেষ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই কিছু দুষ্টু লোক থাকে, যারা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে সে সব দুষ্টুচক্রকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
পবিত্র কোরআন, ত্রিপিটক, গীতা এবং বাইবেল পাঠের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু করা হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ত্ব এবং রামু জনপদে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের শতশত বছরের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে সভাপতির বক্তব্য রাখেন রামু এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। সর্ব ধর্মীয় মিলনমেলায় পরিণত হওয়া এই সভা পরিচালনা করেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্তভুষন বড়ুয়া।
সভায় তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জহির আহমেদ, ট্রাস্টি এডভোকেট দীপংকর (পিন্টু), হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার জেলা অঞ্চলের ট্রাস্টি প্রিয়োতোষ শর্মা চন্দন, প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক মো: শাখাওয়াত হোসেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয়দত্ত বড়ুয়া, এডভোকেট রাশিদা পারভিন, এডভোকেট লিনা এবং স্থানীয় প্রশানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মুসলিম সম্পদায়ের পক্ষে রামু উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ফয়েজ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষে রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ কে. শ্রী জ্যোতিসেন থেরো, হিন্দু সমপ্রদায়ের পক্ষে রামপুর তীর্থধামের পরিচালনা কমিটির সদস্য সুশান্ত পাল বাচ্চু, এবং খ্রিস্টান ম্প্রদাকয়ের পক্ষে রাংকুট জগতজ্যোতি শিশু সদনের মহাপরিচালক রিতা মালেকা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
মিলনমেলায় রাংকুট জগতজ্যোতি শিশু সদনের শিক্ষার্থীগণ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক জনগণ মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন।