Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স করতে যা যা লাগে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১০:০৩ PM
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১০:০৩ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির জন্য লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনপত্র বিতরণ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশে যে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের কেনাবেচা হয় তার একটা বড় অংশ আসে চোরাই পথে। এবং বিরাট এই ব্যবসা থেকে সরকার কোন শুল্ক পায় না।

বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনপত্র বিতরণের বিষয়টি স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮-র একটি অংশ হিসেবে এসেছে। গত বছর অক্টোবরে মন্ত্রিসভায় নীতিমালাটি অনুমোদিত হয়। আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে চলতি বছর ১৮ই মার্চ থেকে।

কিন্তু কতজন এখন পর্যন্ত এই আবেদন পত্র নিয়েছেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, এখন পর্যন্ত কেউ এই আবেদনপত্র সংগ্রহ করেনি।

তবে তিনি আশ্বস্ত করেন এই বলে যে লাইসেন্স প্রথা চালু হলে মানুষ হয়রানির শিকার হবেন না।

"সরকারের যে নিয়ম আছে, যেমন শুল্ক দেয়া হয়, তাহলে এখানে অন্য কোন সমস্যা থাকার কথা না," তিনি বলছেন, "বরং এই লাইসেন্স দেয়ার ফলে ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ হয়রানি মুক্ত হবে । এবং সরকার লাভবান হবে কারণ সরকার এখান থেকে শুল্ক পাবে।"

এই লাইসেন্স নিতে হলে এক কোটি টাকার মূলধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লাইসেন্স থাকতে হবে এবং ব্যাংকে অফেরতযোগ্য পাঁচ লক্ষ টাকা পে অর্ডার হিসেবে জমা দিতে হবে।

এই আবেদনপত্র যেকোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিতে পারেন।

এদিকে সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও দুটি ইস্যুকে তুলে ধরেছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

তাদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন বলছে, প্রথমেই সরকারকে সহনশীল মাত্রায় শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে। তা না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা।

এই সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলছিলেন, বাংলাদেশে সোনার দাম বেশি হলে মানুষ ভারতে গিয়ে সোনা কেনে।

"সেজন্যই আমরা বলছি, একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সঙ্গতি রেখে শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে।"

"ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে সাধারণত স্বর্ণের দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম। ব্যাংক থেকে ইস্যু করা পিওর সোনার ওপর সরকার একটা শুল্ক বসায়। সেটাতেও দাম কিছুটা বাড়ে," তিনি আরো বলছিলেন, "আমাদের কথা হল - এসব করে দামটা যেন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় না বেড়ে যায়।"

গত বছর যখন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় তখন সব পক্ষকেই ডাকা হয়েছিল। সরকার ছাড়াও সেই আলোচনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরাও ছিলেন। বৈঠকে তাদের প্রত্যেকের মতামত নেয়া হয়।

সেখানে তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

তা না হলে প্রস্তাবিত নীতির বাইরে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক লাইসেন্স দেয়া হলে তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার নেয়ার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারেন।

এদিকে, দুর্নীতি-বিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে স্বর্ণ ব্যবসায়ের উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সেই প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয় যে স্বর্ণ খাতে আমদানি ও দেশীয় বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নেই।

সেই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও জানিয়েছিল সংস্থাটি।

শুল্ক কম ধার্য করার ব্যাপারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবির প্রশ্নে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছিলেন, এটা কমিয়ে আনা উচিত ধাপে ধাপে।

"যে শুল্কের কথা বলা হচ্ছে সেটা চট করে বন্ধ করে দেয়া সমীচীন হবে না। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছি পর্যায়ক্রমে বাজারটাকে যদি এমন একটা জায়গায় উন্মুক্ত করা যায় তাহলে ক্রমান্বয়ে শুল্ক অনেক কমিয়ে দেয়া বা একেবারে উঠিয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে," তিনি বলছিলেন, "বিশ্বের অনেক দেশে তেমন উদাহরণ আছে।"

"তবে সেটা নির্ভর করবে বাজার ব্যবস্থাপনা এবং কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তার ওপর। যেহেতু বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমন আছে তাই প্রতিযোগিতার এই বাজারে ব্যবসায়ীদের এই বক্তব্যের যৌক্তিকতা আছে।"

বাংলাদেশে স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে বছরে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন। যার প্রায় ৩৬ মেট্রিক টন চাহিদা পূরণ করা হয় নানা পথে আনা সোনার মাধ্যমে।

এটা হয়ে এসেছে কারণ গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে এই খাতটি নিয়ে কোন নীতিমালাই ছিল না। বিবিসি বাংলা

Bootstrap Image Preview