বিয়ের মাত্র দেড় মাস না যেতেই স্বামীর বাড়িতে নির্মমভাবে নিহত কলেজছাত্রী সাজিয়া আফরিন রোদেলা (১৮) হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্তি হলো গত বুধবার। দীর্ঘ এই সময় মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে রোদেলার বাবা-মাসহ স্বজনেরা। তবে এ সময়ের মধ্যে এখনো গ্রেফতার হয়নি ঘাতক স্বামী সোহানুর রহমান (২৮)।
ফরিদপুরের সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের ইংরেজিতে অনার্সের মেধাবী ছাত্রী সাজিয়া আফরিন রোদেলা শহরের আলিপুর খাঁ-বাড়ি মহল্লার শওকত হোসেন খাঁন ওরফে শকার একমাত্র মেয়ে ছিলো। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি গোয়ালচামটের নতুন বাজার মহল্লার জনৈক মমিনুর রহমান সেন্টুর ছেলে সোহানুর রহমান সোহানের সাথে তার বিয়ে হয়। অপার সম্ভাবনাময় প্রাণের প্রিয় এই সন্তানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাজিয়া আফরিন রোদেলার মা রুমা খাঁন জানান, গত দুই বছর যাবৎ আমরা বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। এখনো রোদেলার ঘাতক স্বামী গ্রেফতার হয়নি। মামলাটিকে দীর্ঘায়িত করতে নানাভাবে অপচেষ্টা করছে আসামিরা। তিনি রোদেলা হত্যা মামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর ১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রোদেলাকে চাপ দিতে থাকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এজন্য তাকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিতো। একপর্যায়ে রাতের বেলা স্বামী, শাশুড় ও ননদ মিলে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে রোদেলাকে হত্যা করে। ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বর্তমানে এ মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। মামলা নং- ৪১৭/১৭।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার এসআই গাফফার জানান, রোদেলার মৃতদেহের ভিসেরা রিপোর্টে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। ব্যাপক তদন্ত শেষে স্বামী সোহানসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, রোদেলার ননদ সুমি বেগম (৪০), শ্বাশুড়ি আনোয়ারা বেগম (৫৫), ভাসুর মো: সুমন (৩৬), ভাসুরের স্ত্রী রেখা বেগম (২৫), শ্বশুড় মোমিনুর রহমান সেন্টু (৬৫), ননদের স্বামী মো: হাফিজ (৪৫), ও সোহানের মামাতো ভাই সাজিদ (৪২)।
জানা গেছে, মামলার অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন লাভ করেছে। তবে ঘটনার পর থেকেই মামলা প্রধান আসামি সোহানুর রহমান পলাতক রয়েছে। তবে সোহানকে আটকে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ দাবি করছে।
রোদেলার পিতা শওকত হোসেন খান বলেন, এ মামলায় ১৭ জন স্বাক্ষী রয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে চার্জশীট দাখিল করেছে। আশা করছি আসামিদের গ্রেফতারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দ্রুতই চার্জ গঠন হবে।