লাইন অব কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণরেখা) পার হয়ে পাকিস্তানে হামলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পড়ন্ত জনপ্রিয়তায় ফের জোয়ার এনে দিয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগেই এই ‘দূরদর্শী’ হামলা থকে লোকসভায় বাড়তি সুবিধা পেতে যাচ্ছে তার দল বিজেপি। এমনটাই মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের অনেকেই।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ভারতীয় জনগণের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের কাছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি। পকেটে টাকা আর পেটে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা যারা দেবে তাদেরকেই ভোট দেবেন জনগণ। বুধবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধ নিতে মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের ৮০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অন্তত তিনটি অবস্থান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ছয়টি জঙ্গিবিমান। হামলার পুরো প্রক্রিয়া প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে তদারকি করেন মোদি। সকালবেলায় বিমানবাহিনীর এ বীরত্বের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যুদ্বেগে। আনন্দোল্লাসে মাতে ভারতীয়রা।
রাজস্থানের চুরু এলাকায় পূর্ব নির্ধারিত এক সমাবেশে পুর্ণোদ্দমে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মাথায় পাগড়ি পরা মোদি। তার পেছনেই ছিল পুলওয়ামা হামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের রক্তাক্ত ছবি।
ভোরের ঘটনার কথা উল্লেখ না করেই মোদি বলতে শুরু করেন, ‘দেশ ও জাতি এখন নিরাপদ হাতে, কারো সামনে মাথা নত হতে দেব না।’ এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তায় আরও ভুরি ভুরি অর্জন তুলে ধরেন তিনি।
এ সময় সমাবেশ উঠে আসতে থাকে মোদি! মোদি! আওয়াজ। অথচ কয়েকদিন আগেও মোদির র্যালি-সমাবেশে স্লোগান দুরের কথা লোকই খুঁজে পাওয়া যেতে না।
একই সময়ে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলায় গোমতি নদীর তীরে নিজগ্রামের মানুষের ‘দিওয়ালির আনন্দ’ উদযাপন করেছিলেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। এখানে এক জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বাহিনী জঙ্গির সব ঘাঁটিই ধ্বংস করে দিয়েছে।’ অমিত শাহের এ কথায় সঙ্গে সঙ্গে ধ্বনিত হতে থাকে মোদি! মোদি!
২০১৪ সালে হিন্দুত্ববাদের ধুয়া তুলে ভূমিধস জয় পেয়ে ক্ষমতায় আসে মোদির বিজেপি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে নোট বাতিলকরণ, জিসএসটি করারোপের মতো বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে তার সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘সেমিফাইনাল খ্যাত’ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
সাম্প্রতিক সব জরিপেই বলা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে নিশ্চিত হারবে বিজেপি এবং সেটা কমপক্ষে ৪০ আসনের ব্যবধানে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তাই বিজেপির পাকিস্তানে বিমান হামলার মতো একটা ‘বীরত্বের গল্পের’ খুবই দরকার ছিল। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বিমান হামলায় সমস্যার সমাধান হবে না
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আÍঘাতী হামলার জবাবে মঙ্গলবার পাকিস্তানে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করছে ভারত। ওই হামলায় ৩০০ জঙ্গি ও তাদের ২৫ প্রশিক্ষক নিহত হয়েছে বলেও দাবি নয়াদিল্লির। কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত ৫০টি অবস্থানে মর্টার হামলা চালায় পাক সেনা ও বিমানবাহিনী। ভারতীয় বিমানবাহিনী দুটি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করারও দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
অন্যদিকে পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ ফাইটার বিমান ভূপাতিত করার দাবি ভারতীয় বিমান বাহিনীর। পাল্টাপাল্টি এ হামলায় কাশ্মীর সীমান্তজুড়ে বিরাজ করছে ভয়ের পরিবেশ। সেই সঙ্গে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা। একে অপরকে হুমকি-ধমকি অব্যহত রেখেছে। কিন্তু এসব হুমকি-ধমকি আর পাল্টাপাল্টি বিমান হামলায় সমস্যার সমাধান হবে না। বর্তমান সমস্যার উৎপত্তি কাশ্মীর সংকট থেকে। তাই সমস্যার সমাধানে সেখানেই হাত দিতে হবে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় আলোচনায় বসতে হবে। বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।