কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত হবার পর থেকে দুই দেশের উত্তেজনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার পর ভারতের প্রতিরোধের আশঙ্কায় যেকোনো চরম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ শতাংশ সিট খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতও কাশ্মীর সীমান্তে ২৭টি গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। দিন দিন এ এক মহা যুদ্ধে রুপ নিচ্ছে।
বিভিন্ন ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের তিক্ত সম্পর্ক প্রায়ই আক্রোশে রুপ নেয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা যায় দুই দেশের ক্রিকেট ম্যাচে। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার পর এই দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজন বিরাজ করছে। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে ভারতের বুকে। ওদিকে পাকিস্তানের হুঙ্কারও থেমে নেই। আর এই উত্তেজনা আরো এক ধাপ বাড়াচ্ছে দেশ দুটির গণমাধ্যম। যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে সামরিক দিক থেকে কার কত শক্তি সেই হিসেব কষছে গণমাধ্যমগুলি।
সর্বশেয় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া খবর দিয়েছে, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এমনকি দেশটির হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এর খবরে বলা হয়েছে, সীমান্তের কাছে থাকা ২৭টি গ্রামে গোপন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নোটিশে ওই গ্রামগুলো খালি করার জন্য সব প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সীমান্তে ব্যাপক শেলিং হয়েছে। পাক সেনার শেলিংয়ের জবাব দিয়েছে ভারত। এরপরই গ্রাম খালি করার নির্দেশিকা দেয়া হলো।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীদের বলা হয়েছে, তারা যেন শুধুই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে স্কুল বা কোনও সরকারি ভবনে আশ্রয় নেয়।
পাকিস্তান যে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে, তার প্রমাণ মিলেছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার হাতে আসা দুটি সরকারি নথি থেকে। একটি বেলুচিস্তানের সেনাঘাঁটির নথি ও অপরটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসনকে দেয়া একটি নোটিশ। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিলানি হাসপাতালকে চিঠি দিয়ে জরুরি অবস্থার জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছে কোয়েটার পাকিস্তান সেনাঘাঁটি। ভারতীয় এক স্থানীয় পত্রিকার বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
হেডকোয়ার্টার্স কোয়েটা লজিস্টিকস এরিয়ার ফোর্স কমান্ডার জিলানি হাসপাতালের আবদুল মালিককে চিঠিতে লিখেছেন, জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধ হলে সিন্ধু ও পাঞ্জাবের সাধারণ ও সেনা হাসপাতাল থেকে আহত জওয়ানরা আসতে পারেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেই হাসপাতাল থেকে তাদের বেলুচিস্তানের সিভিল হাসপাতালে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যতক্ষণ বেড থাকবে ততক্ষণ এটা করা হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে প্রদেশের সব সেনা ও সাধারণ হাসপাতালে সবরকম মেডিকেল সহযোগিতার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে সেনা হাসপাতালের পাশাপাশি সাধারণ হাসপাতালেও ২৫ শতাংশ আসন আহত সৈনিকদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখার নির্দেশ দেয়া হবে।
এদিকে, ভারতের যে কোনো হামলা কিংবা অভিযান প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীকে ছাড়পত্র দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত বৃহস্পতিবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে শেষে বিবৃতির মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণের ছাড়পত্র দেয়া হয়।
পুলওয়ামার সেই হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে হামলার কড়া জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, আঘাত এলে পাল্টা দিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না ইসলামাবাদ। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাবেদ বাজওয়া বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তারা পুরোমাত্রার জবাব দিতে প্রস্তুত আছেন।
দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় ও সেনাবাহিনীর এমন বাকযুদ্ধের মাঝে এশিয়ায় কী তাহলে যুদ্ধের দামামা বাজছে? প্রতিবেশি দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ দুই দেশ শেষ পর্যন্ত সামরিক সংঘাতে জড়াতে পারে কী? এমন প্রশ্ন এখন বাতাসে ভাসছে।
এদিকে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪৬ সিআরপিএফ জওয়ানের প্রাণহানির ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সশস্ত্র সংঘাতে জড়াতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ। তবে সামরিক এই সংঘাতে প্রতিবেশি দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
পারভেজ মুশাররফ বলেছেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মাঝে যদি কোনো ধরনের যুদ্ধও লেগে যায়, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে; এমন কথা বলাটাও হাস্যকর। পাকিস্তান যদি একটি বোমা ব্যবহার করে, ভারত করবে ২০টি। তখন পাকিস্তান করবে ৫০টি; এটা হবে সর্বনাশা।’
সাবেক পাক এ স্বৈরশাসক বলেন, ‘যারা এ ধরনের শঙ্কার কথা বলছেন, আসলে যুদ্ধের ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণাই নেই।’ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।