রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে ১৮ দফা প্রস্তাব করেছে বিশ্ব শিক্ষা অধিকার আন্দোলন (মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস)।
শনিবার রাজধানী ঢাকার শিশু কল্যাণ পরিষদে বিশ্ব শিক্ষা অধিকার আন্দোলন (মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস) আয়োজিত ‘রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তাদের আলোচনায় এসব দাবি উঠে আসে।
ভাষাসৈনিক ইঞ্জিনিয়ার সাবির আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি ছিলেন।
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলা ভাষাকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ভাষায় পরিণত করতে যা প্রয়োজন তা এই সরকার করবে বলে আশা রাখি।
ভাষাসৈনিক ইঞ্জিনিয়ার সাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনসহ জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
ভাষাসৈনিক ড. জসীম উদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় পর্যায়ে একটি ‘বাংলা ভাষা পরিষদ’ গঠন করতে হবে। যেখানে বাংলা ভাষার প্রমিতরুপ প্রদান ও বিকৃতি থেকে রক্ষা যায়। তবে এখানে প্রাচীন শব্দগুলো থাকতে হবে। আঞ্চলিক বিষয়গুলোকেও স্থান দেয়া হবে।
প্রমিত উচ্চারণ বিশারদ মীর বরকত বলেন, তরুণদের ভাষার প্রতি আগ্রহে সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভাষানীতি করার জন্যে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে ভাষা আন্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুব বলেন, একটি ভাষানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার, উচ্চারণ, বানানসহ কার্যালয়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
ফারুক আহমাদ আরিফ সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৫দফা দাবি তুলে ধরেন সরকারের কাছে। দাবিগুলো হচ্ছে ১. অফিস, আদালতসহ রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বাহন করতে হবে।
২. ভাষাসৈনিকদের প্রতি হামলা ও শহিদদের হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
৩. অসচ্ছল ভাষা শহিদ ও ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা প্রদানসহ আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে।
৪. কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশে ভাষা আন্দোলন জাদুঘর স্থাপন ও ভাষাসৈনিকদের একটি গেজেট প্রণয়ন করতে হবে।
৫. ভাষা শহিদ ও ভাষাসৈনিকদের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন ও গ্রন্থাগারের নামকরণ করতে হবে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. এমদাদুল হক বলেন, বাংলা ভাষাকে মূল্যায়নে সরকারের পদক্ষেপ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের শিক্ষার্থী জীম মণ্ডল বলেন, বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শুদ্ধ উচ্চারণে শিক্ষকদের গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন।
ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আব্দুল ওয়াদুদ।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ঊষা সরদার বলেন, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষার বইপত্র কম। কোথাও কোথাও একেবারে নাই। গ্রন্থাগারগুলোতে বাংলা বইপত্র বাড়াতে হবে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ইলিয়াস শান্ত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাষার বিকৃতি ঘটছে বেশি এটি বন্ধে সরকারকে কোন সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিতে হবে।
আবুজর গিফারী কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন, ইংরেজি বিদ্যালয়গুলোতে বাংলা সাহিত্য চর্চা হচ্ছে না। সেখানে রবীন্দ্র-নজরুলসহ সাহিত্য চর্চার পরিধি বাড়াতে হবে।
সভায় আমন্ত্রিত বক্তাগণ ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনায় এসব দাবি উঠে আসে। আলোচনা সভা শেষে দাবিগুলো চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।