বাঙালি জাতির ইতিহাস গৌরবের। যারা বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়ে পৃথিবীর বুকে স্থাপন করেছিল এক অনন্য দৃষ্টান্ত, মায়ের ভাষার তরে যারা দিয়েছিল প্রাণ, সেইসব ভাষা শহীদের প্রতি অগণিত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। যদিও আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা। তাঁদের অবদানের সাথে প্রতিনিয়তই আমরা করছি প্রতারণা।
সমগ্র জাতির কাছে এবারের '২১ ফেব্রুয়ারি' এসেছিল আরও বেশি শোক নিয়ে। আগের দিন রাত ও আজ ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ঝড়ে গেছে প্রায় ৮০টি তাজা প্রাণ। শোকে মূহ্যমান গোটা জাতি। সেদিনের সালাম-রফিক-বরকত-জব্বারের তাজা খুন আর আজকের আগুনে পোড়া দগ্ধ মানুষের আর্তনাদে বাংলার আকাশে বেজেছে বেদনার নিদারুণ সুর।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছে চকবাজারে হতাহতদের সব করুণ গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বয়ে গেছে বেদনার হাহাকার। স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। এ যেন মুহূর্তেই তছনছ সাজানো বাগান। চারদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ।
অথচ আজকের এই শোকবিহ্বল দিনেও খোদ রাজধানীর পুরান ঢাকাতেই দেখা গেছে ছাদের উপর হিন্দি-ইংলিশ ধামাকা গানের সাথে উচ্ছ্বাসে-উল্লাসে মত্ত কিছু তরুণকে। কি পাষাণ! কি অমানবিক! '২১শে ফেব্রুয়ারি' কিংবা 'চকবাজার ট্রাজেডি' কোনোকিছুই যেন দাগ কাটে না আমাদের অন্তরে। আমরা যেন আজ শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির সেই সব ভাষা শহীদ সালাম-রফিক-বরকত-জব্বার তাঁদের সংগ্রাম কি তবে আজ বৃথা যেতে বসেছে? কেনো আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ভাষা দিবসেও আমরা পারি না ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে। আজ ও আমরা দেখাই ‘২১শে ফেব্রুয়ারি’তে হিন্দি-ইংলিশ গান বাজানোর ধৃষ্টতা।
এ জন্যেই হয়তো কবিগরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, '৭ কোটি মানুষেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে কিন্তু মানুষ করোনি।'