আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ দেশে আর দুর্নীতি হতে দেওয়া যায় না। কারণ দুর্নীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে আঘাত করেছে। দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে ব্যহত করেছে। দুর্নীতি সামাজিক অবক্ষয় ও সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতির কারণে অনেক পেশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সে পেশার আদর্শ ও নৈতিকতা। তাই যে কোন মূল্যে আমাদের দুর্নীতি দমন করতে হবে।
রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘দুর্নীতি রিরোধী অভিযান ও নেতৃত্বের সাফল্য’ শীর্ষক এক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যার পর থেকে দুর্নীতির ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরপর প্রায় দুই দশকে দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে দেশে দুর্নীতের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। ওই সময়ে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে পরিচিত হয়।
তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সর্বক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সবকিছু ডিজিটাল হলে দুর্নীতি এমনিতেই কমতে থাকবে। তাই সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো যাতে তাদের সবকিছু ডিজিটাইজড করে সে ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনেরও দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও থাকতে হবে যা শেখ হাসিনার সরকার দেখাচ্ছেন। জনগণের মন মানসিকতা দুর্নীতি প্রতিরোধে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তাই মানুষের মনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু জ্ঞান দিয়ে কাজ হবে না। এ জন্য মানুষকে যুক্ত করতে হবে, নতুবা কোনো কাজেই সাফল্য আসবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কৌশলী হতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, দুর্নীতি দমনে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনগণকে আরও সচেতন করতে হবে এবং এ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ এ আইন অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে স্বচ্ছতা আনয়ন, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই আইন জনগণকে ক্ষমতায়িত করেছে। জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে আইনগত স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই এই আইনের সঠিক প্রয়োগে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।
আনিসুল হক বলেন, দুর্নীতি দমনে তথ্য প্রদানে সরকারি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা যেতে পারে। সেইসঙ্গে ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও স্বাক্ষরযুক্ত ডাটাবেস এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শুধু দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা, দেশপ্রেম এবং তারুণ্যের অঙ্গীকার। প্রতিজ্ঞা করতে হবে আমি দুর্নীতি করবো না, অন্যকে দুর্নীতি করতে দিবো না।
ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড, বিশ্বজিৎ ঘোষ, মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাবেক সচিব মো. নাসির উদ্দিন, কলামিস্ট ড. মিল্টন বিশ্বাস সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ বক্তৃতা করেন।