মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসাজনক কাজ। তা ছাড়া বিষয়টি বিশ্বে মানবতার এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণও স্থাপন করেছে।
জাতিসংঘের রোমভিত্তিক তিনটি সংস্থা (আরবিএ) এফএও, ডাব্লিউএফপি এবং আইএফএডি এর প্রধানগণ- পৃথক পৃথকভাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি'র সাথে সাক্ষাৎকালে এমন প্রশংসা করেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সদর দফতরে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ও এই তিনটি সংস্থার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার প্রতি আলাপকালে তারা এসব কথা বলেন।
তিনটি সভায়ই জাতিসংঘের সংস্থাগুলির কাছ থেকে অসাধারণ ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর-২০১৮ এর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য সভার সভাপতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। তারা গত দশকে বাংলাদেশের জিডিপিতে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ায় এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তারা অত্যন্ত প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বে মানবতার এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণও স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরকে স্মরণ করেন এবং জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন মিয়ানমার নাগরিকদের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের পক্ষে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি, ডব্লিউএফপি জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য সহায়তা ৫৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৯৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি করেছে।
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) এর মহাপরিচালক জসি গ্রাজিয়ানো ড সিলভা অসাধারণ অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং সহযোগিতার শুরু থেকে বাংলাদেশকে এফএও’র ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মূল্যের ৩২৬টি জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, বর্তমানে এফএও ৩৬ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে ৯৮.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এফএও প্রধান জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)’র অবিলম্বে এবং দীর্ঘমেয়াদী সমর্থন দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশে কৃষিখাতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন স্থানান্তর করার জন্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার জন্য এফএও-এর প্রধানকে অনুরোধ করেন। তিনি এফএওওকে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, লিচুর মত উন্নত ফলের জন্য ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করার আহ্বান জানান।
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভলপমেন্ট (আইএফএডি) এর সভাপতি জিলবার্ট এফ হাউংবো জানান, ১৯৭৪ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে অনুদান এবং কম সুদের ঋণ হিসাবে আইএফএডি ১৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে যা প্রকল্পের প্রায় ৪৬৪ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে।
তিনি আর বলেন, অধিকন্তু ১১.১ মিলিয়ন পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ৩৩টি গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আইএফএডি ঋণ এবং অনুদান হিসাবে ৭১৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। জিলবার্ট এফ হাউংবো গ্রামীণ জনগণের জন্য সম্পদের বিতরণ ও সদ্ব্যবহারে চরম দক্ষতার পরিচয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত সহায়তার জন্য সংগঠনের প্রধানদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশে জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশকে এফএও’র উল্লেখযোগ্য সহায়তা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের সহায়তার বিষয়টিও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অর্থমন্ত্রী আলোকপাত করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ অর্জন করেছে এবং গত দশকে এ অর্জন ছিল সবসময় ৬ এর উপরে।ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ একটি প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং ইতিমধ্যে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশের স্থিতি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সম্বলিত এসডিজি মূলধারার দিকে অগ্রসর হয়েছে।
ভবিষ্যৎ যাত্রায় বাংলাদেশ ও এফএও-এর মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের জন্য এফএও’র মিডিয়া সেন্টার অর্থমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
অর্থমন্ত্রী ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯-এ অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক কৃষি ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি) এর গভর্নিং কাউন্সিলের সভায় ৪২তম অধিবেশনে যোগ দিতে ইতালির রোম রয়েছেন।