বসন্তের আবহে চাদরমোড়া শীতকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গত কয়েকদিনে। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে স্বমহিমায়। আর শহুরে বসন্তেও যেন সেই আত্মীয়তা থাকে। কানে কানে বলে যায়, আজ ভুলিয়ো আপন পর ভুলিয়ো। ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। ঝিরঝিরে পাতা ঝরার শব্দের মত দলে দলে মানুষ এসেছেন আজ মেলায়।
মেলায় ফাগুন আর বসন্তের আগাম আভাস মিলেছিল গতকালই। মঙ্গলবার মাঘের শেষ সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝের রাস্তা থেকে দিব্যি শোনা যাচ্ছিল কোকিলের মন উচাটন করা ডাকাডাকি আর বাতাসে আমের মুকুলের ম-ম গন্ধ। তরুণীদের অনেকেই বাসন্তী শাড়ি আর মাথায় ফুলের টায়রা জড়িয়ে যেন বসন্তের আগাম মহড়া দিয়ে নিলেন মেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর টিএসসির মোড়ে।
সাংস্কৃতিক কর্মী মানজার চৌধুরী সুইট জানান, এ বছর বসন্তের উৎসবের ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ আয়োজন শুরু করেছিলেন দেশের অন্যতম রবীন্দ্র গবেষক, লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক প্রয়াত ওয়াহিদুল হক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফ, আরিফ হোসেন বনি ও মানজার চৌধুরী সুইট। প্রথম দিকে এ উৎসবের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দেশের অন্যতম প্রধান কবি প্রয়াত শামসুর রাহমান।
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, আজ যেমন দর্শনার্থী এসেছেন তেমনি এসেছেন বইপাগল মানুষও। মেলাকেন্দ্রিক ঘোরাঘুরি শেষে সবাই নিজের জন্য নিয়ে নেবেন প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি। এ ছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই শুধু নিজের জন্যই নয়, অনেকেই প্রিয় লেখকের বইটি কিনে দেবেন একান্ত প্রিয়জন, প্রিয় বন্ধু কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যের হাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া জান্নাত বলেন, 'এবারের মেলায় এর আগেও এসেছি। কিন্তু ফাল্গুনের দিন আসাটা বেশ স্পেশাল। আমরা প্রায় একমাস আগে থেকে প্লেন করছিলাম আজকের দিনের জন্য। একই রঙের শাড়ি, জুয়েলারি সব আগে থেকেই ম্যানেজ করতে হয়েছে।'
বসন্তের প্রথম দিন উপলক্ষে দর্শনার্থীর সঙ্গে পাঠকের সংখ্যা বাড়বে; যা চলবে মেলার শেষ দিন পর্যন্ত এমন প্রত্যাশায় রয়েছেন প্রকাশকরা। তাই পাঠক প্রচুর হলে বিক্রিও হবে ব্যাপক।
এ প্রসঙ্গে দেশ পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী অচিন্ত্য চয়ন বলেন, এবার শুরু থেকেই গ্রন্থমেলা পরিপূর্ণতা পেয়েছে। পহেলা ফাগুন ও ভালোবাসা দিবসে গ্রন্থমেলায় মানুষের ঢল নামবে। বিশেষ করে তরুণদের আগমনে গ্রন্থমেলা মুখরিত হয়ে উঠছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, মেলার জন্য একটি স্থায়ী মাঠের প্রয়োজন। যেটি হলে মেলাকে আরও সুন্দর করে আয়োজন করা সম্ভব।