হে বসন্ত,
তোমার স্নিগ্ধ শীতল উষ্ণ ছোঁয়া নিয়ে
এসেছো তুমি আজি আমারি দুয়ারে
রক্তের রঙে ফোটা কৃষ্ণচূড়া নিয়ে
আসিলে নতুন সাজে জগত মাতায়ে
শুভ আগমনের শুভেচ্ছা তোমার তরে
স্বাগতম স্বাগতম তোমায় আজি আমারি ঘরে
যেখানে আছে মুক্ত বাতাস, মাঠভরা সোনার ফসলের হাসি, নদী ভরা জ্বল। যেখানে আছে কুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো এক পসলা শিতল ছোঁয়া, শিমূল গাছের তুলোর মতো খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের ভেলা। যেখানে আছে নিষ্পাপ মায়ের মায়াভরা হাসি, আর গ্রীষ্মের রোদ্দুরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হার না মানা কিছু লৌহমুষ্ঠ মোমের পুতুল। এ’যে এক অপার সৌন্দর্যের লীলাময় এক মহিমান্বিত স্বর্গ। এ আমার বাংলাদেশ, প্রাণের বাংলাদেশ। বাহারি বৈচিত্রে ভরা সোনার দেশ, রূপের নেইতো শেষ।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতি দুই মাস পরপর নতুন কিছু সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় নতুন এক ঋতু। কখনো আধার শেষে আসে নতুন এক ভোর, নতুন এক দুপুর আর নতুন কিছু স্বপ্ন। আর সেইসাথে নতুন করে মহারাণীর বেশে তার নতুন আলো ফুটিয়ে তোলে, রুপে-গুনে পাগল করে তোলে চারপাশ।
তেমনি এক অপার সৌন্দর্য নিয়ে হাজির ঋতুরাজ বসন্ত। আর সাথে নিয়ে আসছে নতুন এক ফাল্গুন, যার সাথে রয়েছে কৃষ্ণচূড়ার বেখদল শুভেচ্ছা। নতুন করে সাজবে প্রকৃতি, নতুন করে ফুটবে আলো, প্রাণ পাবে সব অদেখা স্বপ্ন।
প্রকৃতির দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। ফুটেছে আমের মুকুল। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। মধুর কুহুকুহু ডাক নিয়ে আসবে পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিল। ব্যাকুল করে তুলবে বিরহী অন্তর।
প্রকৃতির এ সাজ শুধু তার নিজের মাঝেই লুকিয়ে থাকে না। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে বসন্তের সাজে দেশজুড়ে সকলে ব্যাকুল হয়ে থাকে। প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে রমণীরা নিজ রুপে সাজিয়ে তোলে নতুন এক স্বর্গরাজ্য। খোপায় লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়ার ফুল। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যেভরা বাসন্তি রঙের শাড়ি। গায়ে জড়াবে মাটির তৈরি অলংকার। আহ! আসলেই প্রকৃতি যেন হার মেনে যায় এ সাজের কাছে। এইতো আমার মা, মাটির মা।
বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায়সহ অন্যান্য রাজ্যে দিনটি বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। দিনটিতে শহর গ্রামসহ সকল স্থানেই বিশেশ আমেজ দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে চলে পিঠা উৎসব। রাস্তায় বসে ফুলের মেলা।
বর্তমানে গ্রামের চেয়ে শহরই বেশ এগিয়ে এ দিনটি পালনের দিক দিয়ে। গ্রামের দিকে দিনটি নিয়ে খুব একটা হৈচৈ দেখা না গেলাও শহরে দিনটিতে সবাই ঘরের বাহিরে চলে আসে। হয়তো চার দেয়ালের ক্লান্তি দূর করতেই এ প্রচেষ্টা। অন্তত বাঙ্গালিত্বকে টিকিয়ে রাখতেই এ চেষ্টা, অথবা শীতের ক্লান্তি দূর করতে। হয়তোবা চার দেয়ালের মাঝে থাকা ইটের গন্ধ তাকে খাটি মাটির গন্ধ নেয়ার জন্য পাগল করে তোলে! হয়তো কেউ এটাকে একটা বিলাস হিসেবেই গ্রহণ করে!
তবে যে যেভাবেই দিনটিকে গ্রহণ করুক না কেন দিনটি আসলে আমরা যে সকলে তাকে বরণ করতে নতুন রুপে বরণ করে নিই এটাই হচ্ছে বড় কথা।
আমরা সকলেই হয়তো ইতোমধ্যে যেনে গিয়েছি এই স্বর্গরাজ্যের আবির্ভাব হচ্ছে কাল সকালেই। ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১ ফাল্গুন ১৪২৫। হ্যা, রাত পোহালেই আসছে দিনটি। বাঙালি প্রস্তুত তোমাকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য।
লেখক: মোঃ সবুজ খান, সহ-সম্পাদক, বিডিমর্নিং