Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভারতীয় নৌ-জোটে থাকছে মালদ্বীপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০১:৫১ PM
আপডেট: ২৯ জানুয়ারী ২০১৯, ০১:৫১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত জলভাগের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখার জন্য যে আন্তর্জাতিক টানাপড়েন চলছে, সেই ভূ-কৌশলগত লড়াইয়েও মালদ্বীপ ভারতের শিবিরেই থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েই ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি জানিয়েছিলেন যে, ভারতকেই তিনি ঘনিষ্ঠতম সহযোগী মনে করছেন। প্রেসিডেন্ট সোলির শপথ গ্রহণে হাজির ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে ভারত সফর সেরে গেছেন প্রেসিডেন্ট সোলি নিজেও।

এবার ভারত সফর করলেন মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মারিয়া দিদি এবং সে দেশের সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদাধিকারী মেজর জেনারেল আবদুল্লা শামাল। ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার নিরাপত্তা বৈঠক করতেই প্রেসিডেন্ট সোলির দুই প্রতিনিধির এই ভারত সফর।

নয়াদিল্লিতে পা রেখেই দ্বীপরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বলেছিলেন, ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশের সঙ্গে সামরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রয়োজন মালদ্বীপের নেই। নাম না করলেও, আসলে চীনের সঙ্গে কোনও সামরিক সমঝোতায় না যাওয়ার কথাই যে মারিয়া দিদি বলেছিলেন, তা বুঝতে কূটনীতিকদের কোনও সমস্যা হয়নি।

রবিবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেজর জেনারেল আবদুল্লা শামাল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইন্দো-প্যাসিফিক জোটকে সমর্থন করতেও তারা তৈরি।

সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল শামাল বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক হলো এমন একটা ভূ-রাজনৈতিক গঠন, যা থেকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।’’

ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের ধারণাটা ক্রমশ আরও মজবুত হবে এবং অনেক ছোট ছোট দেশ তাতে শামিল হবে বলে মালদ্বীপের সামরিক কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরের সুবিশাল জলসীমায় কার আধিপত্য থাকবে, তা নিয়ে এশিয়ার দুই বড় শক্তি চীন এবং ভারতের মধ্যে টানাপড়েন ক্রমশ বাড়ছে। সামরিক বা ভূকৌশলগত কারণে তো বটেই, বাণিজ্যিক কারণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগরীয় আন্তর্জাতিক জলপথ। নিজেদের নৌ শক্তি এবং রণতরীর সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়ে, ভারত মহাসাগরীয় এলাকার নানা অংশে বন্দর তৈরি করে, সামরিক টহলদারি বাড়িয়ে চীন গোটা জলপথে একাধিপত্য কায়েম করতে চাইছে বলে ভারতীয় কূটনীতিকদের মত।

তবে চীন কোনও দিনই তা স্বীকার করে না। বেইজিং বার বার-ই বলে, আন্তর্জাতিক জলপথের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই চীনা নৌবাহিনী তৎপরতা বাড়িয়েছে গোটা ভারত মহাসাগরীয় এলাকায়। ভারতের বা অন্য কোনও দেশের প্রভাব খর্ব করা চীনের উদ্দেশ্য নয় বলেও বেইজিং দাবি করে।

বলাই বাহুল্য, বেইজিংয়ের এই তত্ত্বে নয়াদিল্লি বিশ্বাস রাখে না। চীনা আধিপত্য রুখতে তাই ভারতীয় নৌবাহিনীও তৎপরতা বাড়িয়েছে গোটা ভারত মহাসাগরে। ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই, মরিশাস, সেশ্যেলস, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন ভারত মহাসাগরীয় দেশের সঙ্গে সামরিক সমঝোতা দ্রুত বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি।

আধিপত্য বিস্তারের চীনা প্রচেষ্টা নিয়ে যে শুধু ভারত উদ্বেগে, তা কিন্তু নয়। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিগুলিও সমান উদ্বেগে। তাই ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এই সুবিশাল জলভাগে একটি সুসংহত সামরিক সমঝোতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা। জাপান অনেকাংশেই সেই সমঝোতার অংশ। ধীরে ধীরে এই অক্ষে জায়গা দেওয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকেও। আড়ে-বহরে ক্রমশ বাড়তে এই সামরিক সমঝোতাকেই কূটনীতিকরা ইন্দো-প্যাসিফিক নামে ডাকছেন। ভারত মহাসাগর বা ইন্ডিয়ান ওশান থেকে প্রশান্ত মহাসাগর বা প্যাসিফিক ওশান পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি বলেই ইন্দো-প্যাসিফিক নামে ডাকা হচ্ছে।

বিরাট জলভাগ জুড়ে এই ক্রমবর্ধমান সামরিক সমঝোতাকে চীন যে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত-জাপান-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া অক্ষের বিরুদ্ধে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম একাধিকবার তোপ দেগেছে। কিন্তু মালদ্বীপের সামরিক বাহিনী প্রধান বুঝিয়ে দিলেন, চীনা তোপের পরোয়া তারা করছেন না। প্রয়োজন হলে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে শামিল হতে বা ওই জোটকে সমর্থন করতেও যে তারা প্রস্তুত, দ্বীপরাষ্ট্রের সেনাকর্তা তা স্পষ্ট করে দিলেন।

Bootstrap Image Preview