রেসিজম! মানে বর্ণবাদ। আমাদের কাছে ব্যপারটা সাধারণ হলেও অনেক দেশেই ব্যপারটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিশেষ করে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গরা যখন নানান কারণে বর্ণবাদের শিকার হন শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা। আমরা হয়তো খুব সহজেই একজনকে ‘কালো’ বলে সম্বোধন করে ফেলি। আমাদের কাছে এটা যেন কোনো অপরাধই নয়।
সম্প্রতি খেলার মাঠে বর্ণবাদী কুটুক্তি করে ফেঁসেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক সারাফারাজ আহমেদ। সারফারাজের অপরাধ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড় অ্যান্ডেল ফেলুকায়ো’কে কুটুক্তি করেছেন ‘কালো’ বলে। ফলাফলটা বড্ড নিদারুণ! ক্রিকেট দুনিয়ায় নিন্দার ঝড়ের মুখে পড়ে সারফারাজ ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। তবুও মিলেনি মুক্তি। আইসিসি জারি করে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।
সারাফারাজ কি জানেন এই বর্ণবাদের জন্য কতটা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকারই নোবেল জয়ী কিংবদন্তী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কাজ করায় দীর্ঘ ২৭টি বছর তাঁকে কাটাতে হয়েছে কারাগারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৪৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় বর্ণবাদে বিশ্বাসী ন্যাশনাল পার্টি। এরপরই রাজনীতি যোগদান করেন ম্যান্ডেলা। শুরু হয় ম্যান্ডেলার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম। ১৯৫২ সালে তিনি নেতৃত্ব দেন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে। ১৯৫৬ সালে ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করে সরকার। জেলে থাকার সময়েও থেমে যায়নি আন্দোলন, দমে যাননি ম্যান্ডেলা। বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকে ম্যান্ডেলার অভূতপূর্ব সমর্থন। কারাগারে ম্যান্ডেলাকে চুনাপাথরের খনিতে পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। কারাগারেও চালু ছিলো বর্ণভেদ প্রথা। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দিদের দেয়া হত সবচেয়ে কম খাবার।
অবশেষে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম আর ত্যাগের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় অবসান হয় বর্ণবাদের। ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান ম্যান্ডেলা। ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী হন। আর ১৯৯৪ সালের ১০ই মে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে বিশ্বের দরবারে রাখেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
আমিনুল ইসলাম নাবিল