স্কুল শেষে বাড়ি ফিরছিলো দুই ভাই বোন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাদের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। মাঝ রাস্তায় আটকে যায় তাদের বাড়ি ফেরা। মাঝ রাস্তায় পথিকেরা তাদের আবিষ্কার করেন এভাবে, দু’টি স্কুলব্যাগ। একটি লাল, আরেকটি সবুজ আর কালো মেশানো। পাশে শুয়ে আছে দুই শিক্ষার্থী, সম্পর্কে তারা ভাই-বোনও, তাদের শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে রক্ত। মেয়েটির দু্ই পা শরীরের সঙ্গে আর নেই। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পা দুটির মাংস পড়ে আছে এলোমেলোভাবে সড়কের ওপর। ঠিক যেখানে ভাইটির মাথা শেষ হয়েছে, সেখানে বোনটির নিথর শরীর শেষ হয়েছে। এখানেই তাদের শরীরের ওপর পড়ে রয়েছে একটি নম্বরপ্লেট, পাশে মোটরসাইকেলের ভাঙা টুকরা। উৎসুক মানুষের জটলা।
দৃশ্যটি সোমবার বেলা ১১টার কিছু পরের, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মোল্লারপুল এলাকায়।
মোটরসাইকেল আরোহী ওই দুই ভাই-বোনকে চাপা দিয়ে চলে গেছে একটি ট্রাক। মোটরসাইকেল চালক বাবা কলিম হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত ভাই-বোন হলো কেরানীগঞ্জের কসমোপলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসার হোসেন ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিমা আফরিন।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন রাজেন্দ্রপুর মোল্লারপুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদে ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ৪০ মিনিট অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা।
প্রকৌশলী মো. আলীমুজ্জামান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাবা কলিম হোসেন স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় প্রিয়াঙ্গণ আবাসিক প্রকল্পের গেটের সামনে মালবোঝাই একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে পিষ্ট হয়ে আফসার (৭) ও আফরিন (৯) নামে দুই ভাই-বোন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই আশপাশের লোকজন দ্রুত ছুটে এসে মোটরসাইকেল চালক তাদের বাবা কলিমকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনসুর আলী বলেন, ঘাতক ট্রাকটি আটক করা গেলেও পালিয়ে যায় চালক ও হেলপার। নিহত দু’জনের মরদেহের সুরতহাল শেষে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে দুই শিশু শিক্ষার্থী নিহতের খবরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে কসমোপলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
‘সড়কে আর কত প্রাণ ঝরবে’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এমন অনেকগুলো দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
স্কুলের শিক্ষক রাবেয়া বশরী বলেন, আজ স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উৎসব ছিল। খেলা শেষে শিশুদের বাবা তাদের নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তাদের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন রাজেন্দ্রপুরের পুরাহাটি এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজেন্দ্রপুর মোল্লারপুল এলাকায় একটি ট্রাক তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভাই-বোন নিহত হয়। বাবা গুরুতর আহত হন।
এর প্রতিবাদে ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ইকুরিয়া এলাকায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সামনে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহজামান জানান, আমরা ট্রাকটির চালক ও হেলপারকে আটক করেছি। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষার্থীরা। আব্দুল্লাপুর-ধলেশ্বরী সেতুর কাছে রডভর্তি ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আটক করা হয়। চালক ও হেলপারকে আটকের চেষ্টা চলছে।