একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে। ইতোমধ্যে রাজধানী ও আসেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলের নেতা কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে জড়ো হয়েছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সমাবেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
শনিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে অংশ নিতে জনসাধারণের আগমনে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা জনস্রোতে পরিণত হয়েছে।
সরিজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতকর্মীরা বেলা ১১টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ‘জয়বাংলা স্লোগানে’ পুরো এলাকা মুখরিত হয়েওঠে।
এদিকে দুপুর ১টার দিকে বুদ্ধিজীবি কবরস্থানের সামনে যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা লীগের সমাগম লক্ষ করা যায়। এখানকার প্রবেশাদ্ধারে ভীড় থাকায় অনেককে দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা যায় পরে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এছাড়া সবুজবাগ ছাত্রলীগ, কদমতলী থানা আওয়ামী লীগ। এছাড়া এখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকনের সৌজন্যে বিনামূল্যে মিনারেল ওয়াটার বিতরণ করতেও যায়।
অন্যদিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের বিপরীত পাশে উদ্যানের গেট দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেশি প্রবেশ করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নেতকর্মীরা এখানে জমায়েত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইমাম হাসান বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হলে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। আমরা সবাই মিলে আজকে বিশাল বিজয় উদযাপন করব।
অন্যদিকে জনতার উপচেপড়া ঢেউ কাকরাইল মোড় হয়ে মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। পল্টন থেকে হাইকোর্ট ফোয়ারা হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে টিএসসির মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের পদাচারণায় মুখরিত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শনিবার প্রথমবারের মতো জনসভায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর এটাই প্রথম জনসভা আওয়ামী লীগের। এ সমাবেশ থেকে বিপুল সমর্থন জানানোয় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাস নির্মূলে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুশাসনমূলক নির্দেশনাও দেবেন তিনি।
সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা
উৎসবমুখর এ আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে ভোর থেকেই এলাকাজুড়ে পুলিশ, র্যাব, ডিবি পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে দেখা যায় সাদা পোশাকধারী বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। উদ্যানের প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে, এর মধ্য দিয়ে সবাইকে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রবেশপথে পুলিশ সদস্যরা হাতেও তল্লাশি করছেন।
অনুষ্ঠানস্থলে কোনো ধরনের হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, দাহ্য পদার্থ বা ধারালো কোনো বস্তু বহন না করার জন্য আগেই অনুরোধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তব্যরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধও জানিয়েছে তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা, শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি উপস্থিতির পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে এপিসি, জলকামান ও রায়ট কার। এছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বিজয় উৎসবকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিশেষ পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া পুরো সমাবেশ এলাকা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আছে, কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে ডগ স্কোয়াড ও মেটাল ডিটেকটর দিয়ে উৎসবস্থল স্যুইপিং করা হয়েছে।